প্রতিবেদন: পরিপ্রশ্ন আয়োজিত ওয়েব সেমিনার

ওয়েব ম্যাগাজিনের প্রথম সংখ্যায় পরিপ্রশ্ন আয়োজিত প্রথম চারটি ওয়েব সেমিনার সম্পর্কে পাঠকদের আমরা অবহিত করেছি। তারপর আরো তিনটে সেমিনার আমরা আয়োজিত করেছি। সেই সম্পর্কে কিছু কথা রাখলাম আপনাদের দরবারে।

পঞ্চম ওয়েব সেমিনার– অনুষ্ঠিত হয়েছে আগষ্টের ১৬ তারিখে। বিষয় : অতিমারীর বিজ্ঞান-দর্শন। বক্তা ছিলেন চিকিৎসা গবেষক ডাক্তার পার্থ চক্রবর্তী

(মুখ্য বিজ্ঞানী, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ কেমিকাল বায়োলজি), যিনি পরিপ্রশ্ন পত্রিকার একজন নিবিষ্ট পাঠক, নিয়মিত লেখক এবং পৃষ্ঠপোষক। বক্তব্যের শুরুতে পত্রিকার নাম ও নামের তাত্পর্য তুলে ধরে  তাঁর আলোচ্যর গতিপথ নির্ধারণ করে দেন ডাক্তার  চক্রবর্তী। নভেল করোনা ভাইরাসজনিত অসুস্থতার তথ্য ও তত্ত্বকে ঘিরে অজস্র শব্দ অনৈক্যের যে ভীড় বক্তা তার স্বাভাবিকতাকেই  হাজির করেন বিজ্ঞান- দর্শনের আলোকে।

জীবনবিজ্ঞানের পরিসরে বিজ্ঞানের সংজ্ঞা ও স্বজ্ঞা নিয়ে তাঁর আলোচনা ছিল গভীরতার সন্ধানী। বিজ্ঞানকে telos (আপ্ত) হিসাবে না দেখে সম্ভাবনাময় জ্ঞানতত্ত্ব হিসাবে দেখার প্রস্তাব করেন ড. চক্রবর্তী । এই প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন,  বিজ্ঞান একটি সামাজিক উত্পাদন প্রক্রিয়া যা পরিনতি পেয়েছে পণ্যমায়ায়। করোনকালীন সময়ে তা আরো প্রকাশ্যে এসেছে। স্লাইডসহ বক্তব্য রাখার পর দীর্ঘসময় ধরে শ্রোতাদের প্রশ্নের তিনি উত্তর দেন।

ষষ্ঠ ওয়েব সেমিনার —–

 বিষয়: “জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০: রাজমন্ত্র না কর্পোরেটতন্ত্র “

আলোচক: অধ্যাপক দেবাদিত্য ভট্টাচার্য। বক্তা কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে (আসানসোল) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক।

অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩০-০৮ তারিখে।

সম্প্রতি কেন্দ্রিয় সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষনা করেছে। ৩৪ বছর পর যে শিক্ষানীতি প্রকল্প হিসাবে লোকসভায় আলোচনা না করেই গ্রহণ করা হ’লো বক্তার বিচারে তা জনবিরোধী। এই শিক্ষানীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশদ উল্লেখ করে দেবাদিত্যবাবু তার প্রতিটি দিকের সামাজিক ও অর্থনৈতিক তাত্পর্য ব্যাখ্যা করেন। এই প্রকল্প লাগু হ’লে শিক্ষা বেসরকারি পরিচালনায় চলে যাবে এবং বাস্তবে সকলের জন্য শিক্ষার অধিকার বিষয়ক সাংবিধানিক অধিকার এক প্রহসনে পরিনত হবে বলে বক্তা সুনির্দিষ্ট মত প্রকাশ করেন। শিক্ষায় বিদেশি বিনিয়োগের রাস্তা প্রশস্ত করার লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা বলে বক্তা জানান। সমাজের আর্থিকভাবে অনগ্রসর বড়ো অংশের জন্য পিটুলিগোলা জলকে দুধ বলে চালানোর চেষ্টা এই শিক্ষানীতির মধ্যে স্পষ্ট একথা বক্তব্য থেকে উঠে আসে। বক্তব্যের পর দীর্ঘ সময় ধরে প্রশ্নোত্তর পর্ব চলে।

সপ্তম ওয়েব সেমিনার–

বিষয়: কৃষি-বীজের বাণিজ্যকরন ও ভবিষ্যৎ খাদ্য সংকট। 

তারিখ : ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২০। 

বক্তা ছিলেন কৃষিবিজ্ঞানী ড. মানসকুমার পন্ডিত। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে হর্টিকালচার বিভাগে তিনি অধ্যাপনা-গবেষণার কাজ করেন।

বক্তা প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন যে আধুনিক কৃষির নামে যা চলছে তা যদি চলতেই থাকে তবে অদূর ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট অবশ্যম্ভাবী। কৃষি সভ্যতার সূচনা আসলে মানুষের সভ্যতার সূচনা হিসাবে স্বীকৃত। কৃষিতে পুঁজিবাদী অনুপ্রবেশ উৎপাদনকে বাড়িয়েছে সন্দেহ নেই কিন্তু তার জন্য মূল্য দিতে হয়েছে অনেক। প্রধানত জমির উর্বরতা বৃদ্ধির নামে প্রচুর সারের ব্যবহার, ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়া  ও রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার প্রকৃতিকে ভয়ংকরভাবে বিপন্ন করেছে। জৈব বৈচিত্র‍্য বিপজ্জনকভাবে কমছে। ক্রমাগত উৎপাদন বৃদ্ধি বজায় রাখার প্রয়োজনে আরো বেশি বেশি করে সার, জল ও কীটনাশকের ব্যবহার একদিকে কৃষককে ফেলে দিয়েছে ঋণের ফাঁদে অন্যদিকে পরিবশদূষণ মাত্রা ছাড়াচ্ছে। কৃষির খরচ বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে অথচ কৃষিপণ্যের উপযুক্ত দাম না থাকার কারণে কৃষকদের বহুজাতিক কোম্পানির কাছে বাঁধা পড়ে থাকতে হচ্ছে।

  ভারতের ৭৩২ টি জেলার ১০০ টি জেলায় উচ্চফলনশীল চাষ খাদ্য উত্পাদন করে। অন্যত্র চাষ এখনো প্রকৃতি নির্ভর। বক্তার মতে পরিবেশ ও কৃষি উত্পাদনে ভারসাম্য রক্ষা এদেশে এখনও সম্ভব। কিন্তু জল দূষিত ও নিঃশেষিত হওয়া ও আঞ্চলিক পরিবেশের উপযোগী বীজ কৃষকের হাত থেকে বৃহত্ প্রতিষ্ঠানগলোর হাতে চলে যাওয়ায় কৃষির ভবিষ্যত বহুজাতিকের ইচ্ছানির্ভর হয়ে যাচ্ছে। খাদ্য উত্পাদনে সংকট তৈরী করে তা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে বক্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

  উল্লেখ করা যায় সেমিনারের চালু ঢঙে বক্তব্য না রেখে, গল্পের মত করে, কৃষকদের সঙ্গে তাঁর সরাসরি সম্পর্কের  নির্যাসের ভিত্তিতে যেভাবে তিনি সমস্যাটিকে হাজির করেছেন তা শ্রোতাদের সপ্রশংস দৃষ্টি এড়ায় নি।

অষ্টম ওয়েব সেমিনার:

তারিখ ও সময়: আগামী শনিবার, ১৯ ই সেপ্টেম্বর।

বিকেল ছয়টা থেকে রাত্রি সাড়ে আটটা পর্যন্ত।

বিষয় : করোনাজনিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় পুঁজিবাদী আগ্রাসন।

বক্তা-ডাক্তার অমিতাভ চক্রবর্তী, বিশিষ্ট শল্য চিকিত্সক ও প্রাবন্ধিক।

গুগুল মিট- লিংক:

https://meet.google.com/kkc-dhut-eow

পরিপ্রশ্ন পত্রিকার সম্পাদক মণ্ডলীর পক্ষ থেকে এই ওয়েব সেমিনারে সকল পাঠক বন্ধুদের জানাই সাদর আমন্ত্রণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top