গণ-রসুই ঘর থেকে জন পাঠাগার– সহমর্মী থেকে সহযোদ্ধা

 অরিজিৎ

সংকটের সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ঐতিহ্য বাংলার সমাজের অভ্যন্তরেই আছে। এই সহমর্মিতার ভাবনার মধ্যে পাপপূণ্যের ভাবালুতার বদলে সামাজিকতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা, কর্তব্যের ধারণা অনেক বেশি পরিমানেই বাঙালির মনে ঢুকে আছে। অতীতেও দেখেছি রাজ্যের মধ্যে তো বটেই, বাইরের রাজ্যেও, এমনকি দেশের সীমানার বাইরেও বন্যা, খরা, ঝড়, ভূমিকম্পর মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে, রাজনৈতিক সন্ত্রাস বিধ্বস্ত অঞ্চল কিংবা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিধ্বস্ত অঞ্চলে হরেক কিসিমের সামাজিক সংগঠন, বিদ্যালয়, ক্লাব, রাজনৈতিক দল কিংবা গণসংগঠন ত্রাণের কাজে নেমে পড়ে। তাতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনেকেই যোগ দেয়, আর যারা সশরীরে পারে না তারা অর্থ, বস্ত্র যোগান দিয়ে এইসব সংগঠিত উদ্যোগগুলোকে উৎসাহিত করে। এই কর্মকাণ্ডে এঁরাই সংখ্যাধিক্য  এঁরাই মেরুদন্ড। সামাজিক স্তরেই এই স্বতঃস্ফূর্ততা থাকার জন্যেই সচেতনভাবে প্রচুর সাংগঠনিক উদ্যোগ গড়ে ওঠে।

            পাপপূণ্যের ভাবালুতার বদলে ‘সহমর্মিতার জায়গা থেকে ত্রাণের ভাবনা’ নিশ্চিতভাবেই একটা স্তর এগিয়ে থাকা। কিন্তু অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে বলা যায় কোনো তাত্ত্বিক অবস্থান বা রাজনৈতিক দিশা ছাড়াই মানুষ নেমে পড়ে এই কাজে। বামপন্থী রাজনীতির ভাবনা যাদের মাথায় আছে তাদের তো অন্তত শ্রেণি সংগ্রামের তত্ত্ব  নিয়েই নামা উচিত। নিছক সংগঠন গোছানো কিংবা সরকারি ত্রাণ না পাওয়া নিয়ে মানুষের ক্ষোভকে তড়িঘড়ি বিক্ষোভে-বিদ্রোহে রূপ দিয়ে চটজলদি রাজনৈতিক তৃপ্তির বদলে শ্রেণিসংগ্রামের তত্ত্বের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে সহমর্মীর জায়গা থেকে সহযোদ্ধার জায়গায় উত্তরণের কাজটাকে যথাযথভাবে নির্মাণ করতে পারলে আগামীদিনের রাজনীতি, সঙ্ঘর্ষ আর সংগঠন তৈরি করার কাজটা স্বাভাবিকভাবেই সহজ হয়ে যায়।

             এরকম একটা প্রাথমিক ভাবনাকেই পুঁজি করে সংকটের বিগত মাসগুলোয় ময়দানে নেমে পড়তে হয়েছিল। চলমান আর্থিক মন্দা, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, তার ওপর মহামারীর আর মহামারীর অজুহাতে দেশজোড়া লকডাউন এবং দক্ষিণবঙ্গে বিধ্বংসী ঝড় আম্ফানের ত্র্যহস্পর্শে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী তা ভালো করে বুঝে ওঠার আগেই কাজে নেমে পড়তে হয়েছিল।

                বহুমাত্রিক সংকট আমদের সামনে বেশ কয়েকটা চ্যালেঞ্জ যেমন হাজির করেছে তেমনই ভাবনার আর কাজের বেশ কয়েকটা নতুন দিক খুলে দিয়েছে। ত্রাণের কাজ কীভাবে করছি, কী উদ্দেশ্যে করছি তার ওপর নির্ভর করছে কাজটাকে আমরা কীভাবে দেখছি; আবার আমাদের তাত্ত্বিক কাঠামো, সামাজিক চেতনার ওপরও নির্ভর করছে কাজটাকে আমরা কীভাবে সম্পন্ন করবো। হাতে ছিল শোষণমুক্ত সমাজ নির্মাণের জন্য সংঘর্ষ আর সংঘর্ষের জন্য নির্মাণের ধারণা, আর অভিজ্ঞতায় তার বিচ্ছিন্ন – বিক্ষিপ্ত কিছু চরিত্র, কিছু গল্প।

                   এ পর্বে তিনটি আলাদা ধরনের কাজে নিজেদের সংগঠিতভাবে নিয়োগ করার জন্যে আলাদা আলাদা রকমের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। তিনটি আলাদা ধরন: প্রথমটা কলকাতা ও কলকাতা সংলগ্ন মফঃস্বল অঞ্চলের বস্তি, শ্রমজীবী মানুষের বসবাসের অঞ্চলে কাজ। যদিও কলকাতার বাইরেও অন্যান্য জেলায়, সুদূর উত্তরে চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যেও প্রায় একই রকম উদ্যোগের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ থেকেছে। দ্বিতীয়টা দেশ জুড়ে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে; আর তৃতীয়টা আম্ফান অধ্যুষিত উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ত্রাণের কাজ।

            বস্তিতে বসবাসকারী অসংগঠিত শ্রমিকদের মধ্যে ধীরে ধীরে গড়ে তোলা কাজের একদশকের অভিজ্ঞতা, একটা রকমের তাত্ত্বিক বোঝাপড়া এই কাজটাকে খানিক হলেও সহজ করে দিয়েছিল। বাইরে থেকে স্রেফ রেশন সামগ্রী নিয়ে বন্টন করার পরিবর্তে সচেতন প্রয়াস ছিল বস্তিবাসী মানুষদের নিজেদের উদ্যোগকে আরও বিকশিত করা এবং বিভিন্ন বস্তিতে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের পারস্পরিক ঐক্যের ভাবনা। অতীতে তৈরি হওয়া ‘বস্তিবাসী শ্রমজীবী অধিকার রক্ষা কমিটি’র তরফ থেকেই কাজটা করা হয়। একসময় বস্তি উচ্ছেদ-বিরোধী লড়াই থেকে শুরু করে নাগরিক পরিসরে, কর্মক্ষেত্রে শহর কোলকাতার নানান বস্তিতে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই –মাঠে-ময়দানে-আদালতে চালিয়ে যাওয়ার জন্যই গড়ে উঠেছিল এই সংগঠন। দলমতনির্বিশেষে বস্তিবাসী মানুষের নিজস্ব শ্রেণিগত স্বার্থে কাজ করবে এই সংগঠন, হয়ে  উঠবে বস্তিবাসীদের নিজেদের সংগঠন -এই ছিল ভাবনা। আজ কোভিড আসার পর সেই লড়াই আরো অনেক কঠিন হয়েছে। সহ-নাগরিকদের দিক থেকে সংহতির প্রয়োজনীয়তা অনেক গুণ বেড়েছে।  বস্তি অঞ্চলগুলোয় গণরসুই চালানো বা শ্রমজীবী পরিবারগুলোতে রেশন পৌঁছে দেওয়ার সাথেই চালানো গিয়েছে বস্তিবাসীর অধিকার নিয়ে প্রচার, রেশনকার্ড আর প্রাপ্য সরকারী রেশন নিয়ে বারবার সরকারের দপ্তর, কাউন্সিলার, মেয়রের দপ্তরে ডেপুটেশন; নিজেদের কাজের জায়গায় বেতন পাওয়া-না-পাওয়া নিয়ে সমস্যা, কাজ থেকে ছাঁটাই হয়ে যাওয়া নিয়ে সমস্যায় তাঁর পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি। আর এ সবই করা গিয়েছে যতটা সম্ভব বস্তিবাসী শ্রমিকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করিয়ে। নিজেরাই এক বস্তি থেকে অন্য বস্তিতে যোগাযোগ তৈরি করেছে, পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি অর্থ সংগ্রহের কাজেও তারা উদ্যোগ দেখিয়েছে। গত ২৫শে মার্চ থেকে ৩১ শে জুলাই অবধি  সময়ের মধ্যে ১৫০০ পরিবারকে নিয়মিত রেশন (প্রতি দু’সপ্তাহ অন্তর) ও ৩৫৩৩ পরিবারকে এককালীন রেশন, আমফান পরবর্তী সময়ে ১৫০ পরিবারকে শুকনো খাবার, ২০৯ পরিবারকে ত্রিপল দেওয়া হয়। ১০০ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য খাতা ও পেন কেনা হয়।

       পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর কাজটার ধরণ ছিল অন্যরকম। মূলত একটা দেশজোড়া নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছিল, বিভিন্ন রাজ্যে কোথাও আমাদেরই পূর্বপরিচিত, কোথাও নতুন খোঁজ পাওয়া স্বউদ্যোগী, ব্যক্তি, কোথাও স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়ন বা ছোটখাটো এনজিওদের সাথে যোগাযোগের ভিত্তিতে বানানো হয়েছিল এই নেটওয়ার্ক। বেঙ্গালুরু, কেরালা, চেন্নাই, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, হরিয়ানা, আসাম এবং বাংলার বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পেরেছি। জমিতে কাজ এবং কেন্দ্রীয়ভাবে কাজটাকে পরিচালনা করার ব্যপারে বহু চেনা-অচেনা মানুষ উদ্যোগী হয়ে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছে। এ প্রসঙ্গেও বলতে হয় বিভিন্ন রাজ্যে প্রবাসী মজদুরদের মধ্যে কাজের সূত্রে থাকা অভিজ্ঞতা এই কাজটির নির্মাণে  যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে। প্রথম এবং দ্বিতীয় লকডাউন পর্বে কাজ ছিল বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া শ্রমিকদের সমস্যা মেটানোর জন্যে বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে যোগাযোগ করা, চাপ দেওয়া। তার পরের দফায় নেটওয়ার্ক আরও মজবুত হওয়ার সাথে সাথে বেশ কিছু জায়গায় গ্রাউন্ডে থাকা কর্মীরা রেশন পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে। তৃতীয় দফায় যখন বোঝা যাচ্ছিল এতেও সমস্যা মিটছে না তখন অবস্থা বুঝে শ্রমিকদের গ্রুপগুলোর কাছে সরাসরি টাকা পাঠানোর কাজ করতে হয়েছে। এমনকি বাইরে আটকে পড়া বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিকের গ্রামে থাকা পরিবারগুলোকে সাহায্য করা হয়েছে। একেবারে শেষ পর্যায়ে যখন শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালু হল তখন বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করার জন্যে একদিকে আর্থিক সাহায্য আর অন্যদিকে ‘নেতাকে বলো’ নামে একটা রাজনৈতিক প্রচার চালিয়ে জনপ্রতিনিধিদের চাপ দেওয়ার কাজে ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। গোটা পর্বে কয়েকশো মানুষ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছে আর তিন হাজারেরও বেশি গ্রুপ মারফৎ প্রায় সত্তর হাজার শ্রমিককে নানাভাবে সহায়তা করা গিয়েছে এই নেটওয়ার্ক মারফৎ।

           এই সামগ্রিক সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যে আম্ফান ঝড় দক্ষিণবঙ্গে নতুন সংকট এনে উপস্থিত করে। ঝড়ে তছনছ হয় সবকিছু, সবচেয়ে ক্ষতি হয় গাছ পড়ে কাঁচা বাড়িগুলোর– ঘর ভাঙে, চাল ভাঙে আরও ব্যাপক সংখ্যায়। কোনো কোনো অঞ্চলে সমুদ্র বাঁধ ভেঙে নোনা জলের বন্যা হয়, ফসল নষ্ট হয়। নোনা জলের ঝোড়ো ঝাপ্টায় নদী তীরবর্তী গাছপালা সব ঝলসে যায়। একদিকে দীর্ঘ লকডাউনের জন্যে মাসাধিককাল রোজগার নেই, তার ওপর বাইরে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে সবেমাত্র ফিরতে শুরু করেছে– তার বাড়তি চাপ। এমন সময় ঘটে গেল এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়। মোকাবিলা কী রকম হল? আমরা জানি। কেন্দ্র সরকারের বাংলা বঞ্চনার নীতি আর রাজ্যে সরকারী ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল দলটার স্থানীয় নেতা, জনপ্রতিনিধি, লুম্পেনদের সম্মিলিত দুর্নীতির ফলে প্রয়োজনীয় সরকারী ত্রাণ (খাদ্য সামগ্রী, ত্রিপল, স্বাস্থ্য পরিষেবা) মানুষের হাতে পৌঁছয়নি। এক্ষেত্রে খাদ্য সামগ্রী আর ত্রিপল নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা কিংবা কিছুদিন গণহেঁশেল চালানো নিছকই সঙ্কটের সময়ে পাশে দাঁড়ানোটুকুই– ভীষণভাবে দরকারী কিন্তু তা কোনোভাবেই একমাত্র বা দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়। আমরা বুঝি একমাত্র সরকারী ত্রাণের মাধ্যমেই এই সঙ্কট থেকে উদ্ধার সম্ভব, যেটা কারো দয়া বা মহানুভবতার দান নয় বরং অধিকার। আবার, মানুষ তার অধিকার, সরকারী প্রাপ্যটা নিয়ে সচেতন নয়, তাই আমরা সচেতন করতে গেলাম– এ ধারণাটা ভুল। বরং ভূমিকা নেওয়ার আছে অন্য জায়গায়– একজোট করা, শাসকদের নজরদারী এড়িয়ে, রক্তচক্ষু এড়িয়ে সংগঠিত হওয়া যায় কিংবা শাসকদলগুলোর ধামা না ধরেও কিছু করা যায় তার সাহসটুকু যোগানো, আত্মবিশ্বাসটা তৈরি হতে সাহায্য করা। ত্রাণ দিয়ে কিংবা সরকারী ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে আমরাই ত্রাতা, শুধু এই হিসেবে মানুষের সামনে উপস্থিত হওয়াটাও সমস্যার। উত্তর আর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিস্তীর্ণ জায়গায় আম্ফান রিলিফ নেটওয়ার্ক নামে একটা তাৎক্ষণিক নেটয়ার্ক ধরণের মঞ্চ বানিয়ে ত্রাণের কাজ চলতে থাকে গোটা মে-জুন মাস ধরে– খাদ্য সামগ্রী, ত্রিপল পৌঁছে দেওয়া, বন্যা বিধ্বস্ত অঞ্চলে কয়েক সপ্তাহ যৌথরান্নাঘর চালানো আর যৌথশ্রম দিয়ে পুনর্নির্মাণের কাজে হাত লাগানো। পাথরপ্রতিমা, নামখানা, মথুরাপুর, রায়দিঘী, কুলতলী, জয়নগর, ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, বসিরহাট, হাড়োয়া, মিনাখার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দফায় দফায় এই কাজ এগোনো গিয়েছে। সঙ্গে ‘ ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম (WBDF) এবং দীর্ঘদিনের সাথী সংগঠন ‘শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগে’র প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে বহু স্বাস্থ্যক্যাম্পের ব্যবস্থাপণা করা হয়।            লড়াইটা যে একার নয়, আর সার্বিক লড়াইটা যে সবাইকে একযোগে লড়তে হবে এ ধারণা পরিস্কার হয় এই কর্মযজ্ঞের মধ্যেই। সহমর্মিতার জায়গা থেকে কাজটা শুরু করলেও সময়ের সাথে সাথেই আসে দীর্ঘস্থায়ী নির্মাণের ভাবনা। যে নতুন নতুন জায়গায় আমরা পৌঁছলাম কিংবা সমমনস্ক যাদের সাথে নতুন আলাপ হল কাজের সূত্র ধরে তাদের আবার হারিয়ে ফেলব না তো? সহযোদ্ধা হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটার শুরু এখানেই। তার হাজারো উপায় থাকলেও আমরা বেছে নিলাম লড়াই আন্দোলন সংগঠিত করার পাশাপাশি ‘সংহতি ইস্কুল’, মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষাশিবির চালানো কিংবা গ্রন্থাগার তৈরির কর্মসূচী। শহর কোলকাতার বস্তিতে অথবা (রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষতঃ সুন্দরবনের) গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া কিংবা ছেলেদের বিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে অল্প বয়সেই, নিজেকে চেনার আগেই, একেবারে নিজের শেকড় ছিঁড়ে ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে চলে যাওয়ার ঢল আমাদের ভাবিয়েছে। যারা থেকেও যাচ্ছে তার কাছে বিনোদনের কিংবা জ্ঞান আহরণের রিসোর্সও কম। এলাকায় বা স্কুলে লাইব্রেরী নেই। এরকম বহু দেখেছি পড়াশোনায় বেশ মনযোগী, স্কুলে হয়তো ভালোই রেজাল্ট করে কিন্তু স্কুলপাঠ্যের বাইরে কখনো কোনো গল্পের বই পড়েনি– হাতে পায়নি তাই পড়েনি। আবার এও দেখেছি একদম কমবয়সীদের কাছে একমাত্র মোবাইলই বিনোদনের উপকরণ; নিজেকে চেনা, নিজেদের সংস্কৃতিকে চেনা, নিজেকে গড়ে তোলা কোনও কিছুই হয় না এটা দিয়ে। এর উল্টোদিকে আমাদের সচেতন প্রয়াসগুলো কী কী হতে পারে? সেখান থেকেই লাইব্রেরীর পরিকল্পনাটা। একটা স্পেস, সমাজে বিদ্যমান স্পেসগুলোর বদলে বিকল্প নতুন একটা স্পেস– যেখানে একসাথে অনেকে ভাবনার আদান প্রদান করতে পারে, সাংস্কৃতিক কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারে। আবার এটাই তার কাছে বিনোদন বা নতুন কিছু জানার মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে– সফলভাবে, দীর্ঘস্থায়ী চলার মধ্যে দিয়ে আটকে দেওয়া যাবে নানান সামাজিক অবক্ষয়। স্বপ্ন দেখার সাহস আগল খুলে দেবে, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে আগামী প্রজন্ম লিখবে জীবন সংগ্রাম আর ছোট ছোট জিতে যাওয়ার গাথাগুলো।

1 thought on “গণ-রসুই ঘর থেকে জন পাঠাগার– সহমর্মী থেকে সহযোদ্ধা”

  1. Arindam chakraborty

    People know what they do,they sometimes also know why they do what they do but they do not know what what they do does Michel foucault

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top