কৃষি-বাস্তুতন্ত্রের বির্পযয় নিয়ে পরিপ্রশ্ন-র ওয়েব সেমিনার

এই ঘরবন্দী দীর্ঘ বিষন্ন সময়কে কিছুটা বাগে আনতে গত দেড়বছর ধরে পরিপ্রশ্ন পত্রিকার ওয়েব-সেমিনার অনলাইন নানা কার্যক্রমের অন্যতম।

সমসাময়িক নানান বিষয়ে বলেছেন স্বক্ষেত্রের বিশিষ্ট জনেরা। ১৬ তম ওয়েব সেমিনারে বললেন অভ্র চক্রবর্তী।

বিষয় ভাবনা আসে বর্তমান কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে। কৃষিতে প্রচুর সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে জল, জমি, অনুজীবসহ মানুষের স্বাস্থ্য বিপন্ন। পাঞ্জাব হরিয়ানা শুধু নয়, সারা দেশের কৃষকদের বড়ো একটা অংশ কৃষি-দূষণের কারণে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক অসুখে আক্রান্ত। কৃষি ব‍্যবস্থা কর্পোরেশনে নির্দেশিত হলে অধিক উৎপাদন ও অর্থকরী ফসলচাষে জোর, ফসল সংরক্ষণ  ইত্যাদি কারণে রাসায়নিকের ব্যবহার অনেকগুণ বাড়বে। আর তাই বাড়বে স্বাস্থ্যহানি। বাড়বে প্রকৃতির নি:সহায়তা। কৃষি বিল বিরোধিতার সোচ্চার আহ্বানে এই আলোচনা প্রায় অনুপস্থিত।

অথচ ৬ হাজারের বেশী বছর ধরে এদেশের চাষীদের রয়েছে খরা-বন্যা প্রতিরোধক নানা ফসল ফলানোর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান। ফসলের বৈচিত্র্যময় সমাহার, তার চাষ ও ফলন এদেশে সব সময়ই বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। মনোকালচারধর্মী কর্পোরেট-অভিমুখী চাষ জমিকে তার প্রাকৃতিক উত্তরাধিকার হারিয়ে সম্পূর্ণ বেসামাল করে দেবে অচিরেই।

এসব চিন্তা অমূলক তো নয়ই বরং ভীষন প্রাসঙ্গিক।

যদিও দলীয় নানা রাজনৈতিক চিন্তায় এখনো তা চিন্তার বিলাসিতা হিসাবেই গ্রাহ্য। অধিক ও দ্রুত লাভের পুঁজিঘন অনুসন্ধান কেমন করে পাল্টে দিচ্ছে প্রান-প্রকৃতি-পরিবেশকে এবং তা তৈরী করছে এক অসমাধিত দ্বন্দ্ব এবিষয়ে গভীর অনুসন্ধান ও অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তাকে পরিপ্রশ্ন অনুধাবন করে। এই ওয়েব সেমিনারের বিষয় ঠিক হয়—

 “কৃষি-বাস্তুতন্ত্রের বিপর্যয় ও বর্তমান কৃষক আন্দোলন”।

বক্তা অভ্ৰ চক্রবর্তী প্রাণবিজ্ঞানের উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে নিজের হাতে কৃষিকাজ করেন—পেশার দাবীতে যেমন জলাশয়ে তেমনটা বা তার থেকে বেশী ‘আপন মনের মাধুরী মিশায়ে’ নিজের মাটিতে। গত

৪ ঠা জুলাই, ২০২১ তারিখে এই ১৬ তম ওয়েব সেমিনার প্রশ্নোত্তরপর্ব নিয়ে দুঘন্টার বেশী সময় ধরে চলে। শুরু হয় বিকাল ৪ টে ৩০ মিনিটে।

বক্তা গভীর প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন যে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে যেভাবে শস্য গ্রাম থেকে শহরে চালান হয়েছে তা মাটির স্বাস্থ্যকে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দিয়েছে, যা পুনরুদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। ধান, গম ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে মাটির নীচের জল, জমির খাদ্যগুণ (মাইক্রোনিউট্রেন্ট) জমি থেকে একমুখী প্রবাহে যে বিপুল পরিমানে শহরে চলে গেছে ও প্রতিদিন যাচ্ছে তা রোখার জন্য কী করা যাবে সে সিদ্ধান্তের গুরুত্ব অপরিসীম।

 তিনি জানান যে, এদেশের জমির দুই-তৃতীয়াংশ পুষ্টিগুণ হারিয়ে, লবনাক্ত হয়ে পড়ার জন্য ও জমিতে জৈব কার্বনের পরিমান কমে যাওয়ার জন্য রীতিমত অসুস্থ। রোগপোকার ব্যাপক উপদ্রব বৃদ্ধি কৃষি-বাস্তুতন্ত্রের সামনে যে সমস্যা তৈরী করেছে তা বড় চ্যালেঞ্জ বলে তিনি উল্লেখ করেন। জমিতে অনুখাদ্য সরবরাহ বাড়িয়ে বা গোবর-সার ব্যবহার করে এই বিরাট বিপর্যয় মোকাবিলা করে কৃষিবাস্তুতন্ত্র রক্ষা কতটা সম্ভব তা নিয়ে বক্তা যথেষ্ট সন্দিহান বলে জানান।

 কৃষি-রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না এমন ধান জমি জীববৈচিত্র্যের বিচারে ক্রান্তিয় বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে তুলনীয় যা রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের নির্বিচার ব্যবহার ধ্বংস করে ফেলায় আমরা বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের উৎসের দিক থেকে নি:স্ব হয়েছি। এগুলি ছিল গ্রামের বহুমানুষের জীবনধারনের সহায়ক ও খাদ্যের প্রাকৃতিক ভান্ডার। বলা বাহুল‍্য এইসব খাদ্যউৎসের উপর ছিলনা কোন মালিকানাও। কৃষি-বাস্তুতন্ত্রের বিপর্যস্ত এই অবস্থাকে পরিবেশ ও পুঁজির দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপট থেকে দেখার উপর গুরুত্ব দেন বক্তা।

 মূল বক্তব্যের পর প্রশ্নোত্তর চলে দীর্ঘক্ষণ। বক্তা ও শ্রোতাদের স্বাগত জানান সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সন্তোষ সেন। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন পরিপ্রশ্ন পত্রিকার সম্পাদক বঙ্কিম দত্ত।

আগামীদিনেও কৃষি বাস্তুতন্ত্র তথা পরিবেশের সংকট, ভারতের কৃষি ব্যবস্থায় তথাকথিত সবুজ বিপ্লবের মারাত্মক কুপ্রভাব, জৈব ও মিশ্র চাষ, ভারতবর্ষ তথা সারা পৃথিবী জুড়ে কৃষির সংকট থেকে সমাধান কোন পথে– এইসব নানা দিক নিয়ে এই আলোচনাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও মূল্যবান মতামতকে পাথেয় করে। আগ্রহীরা এই প্রতিবেদনের সাথে দেওয়া ইউ টিউব লিংক ওপেন করে পুরো বক্তব্যটি শুনতে পারেন।।

প্রতিবেদনটি লিখেছেন অনিরুদ্ধ দত্ত।

যোগাযোগ: ফেসবুক পেজ- ” সমাজ ও বিজ্ঞান বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা পরিপ্রশ্ন।

Email id:

pariprashna.website@gmail.com

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top