লোকসভা নির্বাচন: পুঁজি-প্রযুক্তি- প্রকৃতি ও এক বিকল্প ভাবনা

অরূপ ঘোষ

ভূমিকা

আজ বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ঘিরে বেশকিছু প্রশ্নকে সামনে হাজির করে দিয়েছে। উৎপাদনের পরিমাণগত বিকাশ ঘটাতে গিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে যেভাবে  ব্যবহার করা হয়েছে, প্রশ্ন উঠছে সেই ব্যবহারতন্ত্রকে ঘিরে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের সম্পর্ক

মানুষের সাথে অন্যান্য প্রাণীর জীবগত সত্তার মিল আছে।অর্থাৎ প্রত্যেককেই প্রকৃতির থেকে খাদ্য আহরণ করে বেঁচে থাকতে হয়। এই জীবগত সত্তার প্রয়োজন মেটাতে গিয়েই, মানুষ তার মধ্যে অন্য এক সত্তার জন্ম দিয়েছে। সে অন্যান্য প্রাণীর থেকে আলাদা হয়ে উৎপাদনশীল প্রাণী হিসাবে বিকশিত হয়েছে। এটাই হচ্ছে মনুষ্যসত্তার প্রধান দিক। আবার প্রকৃতিকে পরিবর্তন করতে গিয়ে সে নিজেকেও পরিবর্তন করে ফেলেছে বিস্তর। যার মধ্যে ভাষা একটি। ভাষার হাত ধরে নিজেদের মধ্যে ভাবের  আদান-প্রদানের মাধ্যমে, নিজের বাহিরে জন্ম দিয়েছে সমষ্টিগত সত্তার। যে সত্তার থেকে জন্ম হয়েছে শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। কোন সমাজ কত উন্নত তা নির্ধারিত হয়, সমষ্টিগত সত্তার শিল্প-সাহিত্য ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বিকাশ দেখে । এই বিকাশের মধ্যে দিয়েই সমষ্টিগত সত্তার মধ্যেই যদি ব্যক্তি মানুষ খুঁজে পায় উচ্চতর মানবিক সত্তার খোঁজ, তখন সে একভাবে এগোয়। আর সমষ্টিগত সত্তা যদি সেই উচ্চতর মানবিক সত্তার বদলে, অন্য কোন সত্তার খোঁজ দেয়, তাহলে সে এগোয় অন্য পথে, যে পথে সমাজে মানবিক সত্তা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তখন শিল্প সাহিত্য বিজ্ঞান প্রযুক্তি: প্রতিটি ব্যক্তির মানবিক সত্তাকে ধ্বংস করে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে উগ্র জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে যা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু আজ ঐরূপ যুদ্ধ না দেখা গেলেও অনেক বড় যুদ্ধ ঘটে চলেছে প্রত্যেক ব্যক্তির মানবিকসত্তাকে ধ্বংস করার জন্য।

মানবিক সত্তা ও তার সমষ্টিগত রূপ

যখনই মানুষ প্রকৃতিকে পরিবর্তন করতে গেছে, তখনই সে নিজেকে পরিবর্তন করার মাধ্যমে নিজের মধ্যে জন্ম দিয়েছে উচ্চতর এক আকাঙ্ক্ষার। ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষারই এই প্রতিফলন দেখি সমষ্টিগত মানুষের সৃষ্টি সাহিত্য ও পুরাণের মধ্যে। অর্থাৎ সেই সমাজের মানুষের আকাশে ওড়ার আকাঙ্ক্ষা, জলের উপর দিয়ে হাঁটার আকাঙ্ক্ষা, পাতালে প্রবেশ করার আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি। এই আকাঙ্ক্ষাকেই পূরণ করার জন্য সমষ্টিগতভাবে মানুষই জন্ম দিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির। তাই সমাজ পরিচালকদের দায়িত্ব হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের এই উচ্চতর আকাঙ্ক্ষাকে বোঝা এবং তাকে বাস্তবায়িত করার প্রচেষ্টা চালানো। তবেই সমাজ হবে সৃষ্টিমূলক সমাজ।

উৎপাদন জগতের ভিতরেই মনুষ্য শ্রমের বিবর্তন হয়। অর্থাৎ মনুষ্য শ্রমের দক্ষতা ও ক্ষমতা দুই বাড়ে, ফলে উত্তরোত্তর মানুষ তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে। যাকে বলা হয় উদ্বৃত্ত শ্রম। এই উদ্বৃত্ত শ্রম ঠিক কিভাবে ব্যবহার করা হবে, তাই ঠিক করে দেয় প্রযুক্তির পথ। যদি এই উদ্বৃত্ত শ্রম শ্রমজীবি মানুষের  আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করার লক্ষ্যে ব্যবহার হয়, তাহলে সেই সমাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ এক ধরনের হয়। আর যদি এই উদ্বৃত্ত শ্রম অনুৎপাদক মানুষের আকাঙ্খাকে পূরণ করার জন্য ব্যবহার হয়, তাহলে প্রযুক্তির বিকাশ আর একভাবে হয়। যে প্রযুক্তির থেকে যুদ্ধাস্ত্র তৈরি হয়, যে প্রযুক্তির থেকে মানুষ ঠকানোর যন্ত্র তৈরি হয়, যে প্রযুক্তি মানুষের কাজ কেড়ে নিয়ে মানুষকে নিঃস্ব করে, যে প্রযুক্তি প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ককে ধ্বংস করে নিজেই বড় হয়ে ওঠে।

শ্রমজীবী মানুষের উচ্চতর সত্তাটা কেমন?

মানুষ যখন প্রকৃতিকে পরিবর্তন করতে যায়, তখন সে প্রকৃতিকে অনেক গভীরে জানতে বুঝতে চায়। যতো সে জানতে বুঝতে পারে ততই সে স্বাধীন হয়ে ওঠে তার ক্ষুদ্র প্রয়োজনের জগতের থেকে। সে তখন নিজেকে উচ্চতর এক জগতে বোঝার জন্য সচেষ্ট হয়। একদিকে সে আর উল্টোদিকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে দেখার জন্য আকুল হয়ে উঠেছে। এইজন্যেই সে জেনেছে গাছের সাথে তার সম্পর্ক, সমস্ত ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সাথে তার সম্পর্ক, সমুদ্রের সাথে তার সম্পর্ক, জেনেছে সূর্যের সাথে তার সম্পর্ক, সর্বোপরি সে জেনেছে এই পঞ্চভূত-এর থেকেই তার কীভাবে উৎপত্তি হয়েছে এবং সে কীভাবে বিকশিত হয়ে চলেছে। অর্থাৎ কোন ঈশ্বর তাকে সৃষ্টি করেনি, এই প্রকৃতির বিবর্তনের মধ্যে দিয়েই সে তৈরি হয়েছে। তার অনুভূতিতে ধরা পড়েছে প্রকৃতিই তার প্রসারিত শরীর। প্রকৃতি ছাড়া তার চামড়ায় আবদ্ধ ক্ষুদ্র শরীরের কোন অস্তিত্ব নেই।

উৎপাদক সমাজের এই অনুভূতি কেন বিকশিত হতে পারে না

যখনই মানুষ প্রকৃতিকে পাল্টায় ও তার ব্যক্তিগত ইচ্ছাকেও বিকশিত করতে পারে, তখন সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে, তখন তার মন ও শরীর একই সাথে প্রকৃতির সাথে মেতে ওঠে, যেটাকে সৃষ্টিমূলক শ্রম বলা হয়।   

কিন্তু উৎপাদনের জগতে এসে সে দেখতে পায় তার উল্টো চিত্র। উৎপাদন করতে গিয়ে তার ইচ্ছা তো পূরণ হচ্ছেই না, উল্টে তার সত্তা বিকশিত হওয়ার বদলে নিঃশেষিত হচ্ছে। আবার কিছুদিন পরে দেখে উৎপাদনের জগত থেকেও তাকে ছাঁটাই করা হয় উন্নত কোন মেশিন এনে। তখন মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকাটাই তার কাছে কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। ফলে তখন যেকোন কাজে যেকোন মজুরিতেই সে কাজ করতে বাধ্য হয়। ফলে যে সৃষ্টিশীল শ্রমের মাধ্যমে তার বিকাশ সম্ভব ছিল, তাই পরিবর্তিত হয়ে বাধ্যতামূলক শ্রমে পরিণত হল শুধুমাত্র নিজের জীবগত সত্তা ধারণ করে রাখার জন্য। আর সে দেখতে পেল –প্রকৃতি ও তার মাঝখানে শ্রম করার হাতিয়ার, সেটাই বিরাট আকার ধারণ করল এবং তাকে নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর করল ।

উৎপাদের চরিত্র ও নিঃস্বতার সম্পর্ক

উৎপাদনে তৈরি উৎপাদের মধ্যে একটি দ্বান্দ্বিক  সম্পর্ক আছে। উৎপাদিত পণ্য একদিকে যেমনি মানুষের বস্তুগত প্রয়োজন মেটায়, আবার উল্টোদিকে মালিকের অর্থগত সম্পদের বৃদ্ধির চাহিদা মেটায়। অর্থাৎ উৎপাদ ব্যবহার মূল্য আবার উল্টোদিকে বিনিময় মূল্যের এক আধার। এই দ্বান্দ্বিক চরিত্রটাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যেও এক দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক তৈরি করেছে। বিনিময় মূল্য হিসাবে যার কাছে অর্থ জমে তার আর্থিক সম্পদের পরিমাণগত বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু যার কাছে উৎপাদ ব্যবহার মূল্য হিসাবে ধরা দেয়, তার কাছে উৎপাদ প্রয়োজন মেটাবার মধ্যে দিয়েই শেষ হয়ে যায়, হয়ে গিয়ে অন্য কোন রূপে পরিবর্তিত হয়ে যায়। অর্থাৎ বিনিময় মূল্যে যেমন শুধুমাত্র পরিমাণগত পরিবর্তনটাই প্রধান, কিন্তু ব্যবহার মূল্যের ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তনটাই এক এবং একমাত্র ব্যাপার। এই পরিমাণগত বৃদ্ধির সাথে গুনগত পরিবর্তনের সম্পর্কের এক শত্রুতামূলক সম্পর্ক আছে। পরিমাণগত বৃদ্ধি চাইবে শ্রমিককে কম পয়সা দিয়ে বেশি খাটিয়ে বেশি পণ্য উৎপাদন করতে, আর শ্রমিকরা চাইবে বেতন বাড়িয়ে নিয়ে নিজের জীবন ধারণের মান উন্নয়ন করতে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ যত ঘটে পন্যের মধ্যে শ্রম ও শক্তির খরচ তত কমে যায়। ফলে উৎপাদিত পন্যের দাম পড়ে যায়, পণ্য সস্তা হয়। পণ্য সস্তা করার মধ্য দিয়ে, প্রতিযোগিতায় যখন মালিক পক্ষের মধ্যে থেকে অল্পসংখ্যক মালিক উঠে আসে, তখনই প্রযুক্তির এই নিয়ম পাল্টে যায়। প্রযুক্তি পন্য উৎপাদনে ব্যবহারের থেকে, পণ্য রিয়েলাইজেশনে ব্যবহার হয় অনেক বেশি। অর্থাৎ পণ্যকে বিক্রি করার জন্য বিজ্ঞাপন খাতে প্রচুর খরচ করতে হয়। ফলে বেড়ে যায় শ্রম ও শক্তির অপচয়। কিন্তু অপচয় হতো না যদি পণ্যকে বাজারে কেনাকাটার মধ্যে না রেখে, প্রয়োজন অনুযায়ী উৎপাদক সমাজ নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিতে পারতো। এই ভাগ বাটোয়ারা ব্যবস্থাকে আটকাতেই আজকের প্রযুক্তি।

প্রযুক্তির চরিত্রের মধ্যে বিরোধ

পুঁজিবাদের মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতার যুগ যখন চলছিল, তখন শিল্পপুঁজির বিকাশ হয়। অর্থাৎ উৎপাদন জগতই তখন রাজ করত। তার কারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সবচেয়ে সুন্দরভাবে যে উৎপাদনে প্রয়োগ করতে পারবে তার উপর নির্ভর করত পণ্যের দাম ন্যূনতম হওয়া। এইজন্য সেদিন বড় বড় ইন্টিগ্রেটেড শিল্পের জন্ম হয়েছে। কারখানার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন ফিনান্স এবং মার্কেটিং ডিভিশনের উপর রাজ করে করতো। সমাজেও শিল্পপুঁজি রাজ করতো। ব্যাংক-পুঁজি এবং বাণিজ্য পুঁজিকে তার অধীনে টেনে নিয়ে এসে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছিল। তার কারণ ইন্টিগ্রেটেড হওয়ায় কারখানার মধ্যে অর্থের কোন ভূমিকা নেই। কিন্তু তাকে যখন টুকরো করে দেওয়া হল, তখন অর্থের গতি বেড়ে গেল। কিন্তু শ্রম ও শক্তির খরচ কমার বদলে বেড়ে গেল। উদাহরণ হিসেবে একটি ইন্ট্রিগেটেড স্টিল প্লান্টে প্রবেশ করা যাক। যেখানে ব্লাস্ট ফার্নেস থেকে গলিত লোহা বেরোবার পর বেসিক অক্সিজেন ফার্নেসে গিয়ে exothermic বিক্রিয়ায় তার মধ্যকার দূষিত পদার্থকে একদিকে বার করে দেওয়া হয়, আরেক দিকে তাপমাত্রাও বেড়ে যায়, তার জন্য বাইরে থেকে কোন শক্তির যোগান দিতে হয় না। এবারে সেই গলিত আয়রনকে স্টিলে পরিণত করে গরম অবস্থাতেই সীট, রড, রেল, চাকা ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এই বিশাল কর্মকান্ডে কোথাও অর্থের কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু এই বৃহৎ কারখানাকেই যদি টুকরো করা হয়, অর্থাৎ এক জায়গায় আয়রন ও স্টিলের উৎপাদন, আরেক জায়গায় চাকা তৈরি, এরকম ভাবে যদি টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে কি ঘটে দেখা যাক। স্টিলের ইনগট তৈরি করে সেই উত্তপ্ত ইনগটকে কারখানায় ঠান্ডা করে, ট্রান্সপোর্টে নিয়ে আসতে হয় রোলিং মিলে, সেখানে আবার তাকে গরম করতে হবে, তারপর তাকে রোলিংয়ে নিয়ে যেতে হবে। এতে শক্তির খরচ অনেক বেড়ে গেল। ট্রান্সপোর্ট খরচও অনেক বেড়ে গেল।  তাহলে এরকম করা হয় কেন?

শ্রমিকশ্রেণীকে টুকরো করার জন্য এটা করা হয়, শ্রমিকশ্রেণীকে যত টুকরো করা হয়, তত শ্রমিকদের বেতন নিয়ে দর কষাকষির ক্ষমতা কমে এবং তাদের জীবন ধারণের মানের অবনয়ন ঘটে। এর ফলস্বরূপ অর্থের গতির বৃদ্ধি ঘটে ঠিকই, কারণ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই অর্থের প্রয়োজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্টিলপ্লান্ট থেকে ট্রান্সপোর্টে যখন যাচ্ছে তখন অর্থের একটা প্রবাহ ঘটছে, যখন আবার রোলিং মিলে যাচ্ছে সেখানেএ একটা অর্থের প্রবাহ ঘটছে, এইভাবে কারখানাকে টুকরো করার মধ্যে দিয়ে অর্থের প্রবাহ বাড়ল, শ্রমিকের বেতন কমল। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে শ্রম ও শক্তির খরচের পরিমাণ বেড়ে গেল। যা ইতিহাসের গতির বিরুদ্ধে।

প্রযুক্তিকে ঘিরে ইতিহাসের গতিটা কেমন?

ইতিহাসের গতি হচ্ছে প্রকৃতিকে কম ক্ষতি করে মানুষের প্রয়োজন মেটানো। তার জন্য শুধু উৎপাদনের কথা ভাবলে হবেনা, পুনরুৎপাদনেরও কথা ভাবতে হবে। অর্থাৎ উৎপাদনে কম শ্রম ও শক্তি খরচ করে উৎপাদন করতে হবে। উল্টোদিকে এর ফলে প্রকৃতির মধ্যে যে পরিবর্তন হচ্ছে, তাকেও মেরামত করতে হবে। এটা করতে হলে বিনিময় মূল্যের জগত থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে মুক্ত করে ব্যবহার মূল্যের জগতের বিকাশ ঘটাতে হবে।

 এতদিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে বিনিময় মূল্যের পৃথিবীকে বাড়িয়ে তুলে পন্য-অর্থ-পুঁজির গতিকে চূড়ান্ত করার। এখন এই গতিকেই রুদ্ধ করার প্রযুক্তিকে সামনে আনতে হবে।

পন্য-অর্থ-পুঁজি জীবন্ত হয়েছে কোন ধরনের প্রযুক্তিকে ঘিরে

ইউরোপে জমির উপর ব্যক্তি মালিকানা থাকার কারণে ব্যক্তি মালিকানার পরিধি বিকশিত হয় সর্বত্র। এবং তারই হাত ধরে বিনিময় প্রথার জন্ম হয়। কারণ বিনিময় মানে দুই ধরনের পন্যের মালিকদের মধ্যে বিনিময়। আর ভারতবর্ষের জমিতে ব্যক্তিমালিকানা না থাকার ফলে মালিকানা সম্পর্কের বিকাশ হয়নি। ফলে গ্রামের মধ্যে কৃষক, কামার, কুমোর, তাঁতি সকলেই গ্রামীণ উৎপাদন নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত। কিন্তু ইউরোপে কি ঘটল? যেখানে বিনিময় করে বেশি পয়সায় পাওয়া যাবে সেখানেই সবাই ছুটবে। তারই হাত ধরে কৃষকের সাথে তাঁতি, কামার, কুমোর ইত্যাদিদের সাথে যে সম্পর্ক ছিল তারই ভাঙন ধরল। অর্থাৎ কৃষির সাথে শিল্পের ভাঙ্গন ঘটল।

ছুতোরের উদাহরণ ধরে এগোনো যাক। ছুতোর গ্রাম ছেড়ে গঞ্জে এসে চেয়ার বিক্রি করা শুরু করল, সুতোর এই যে গ্রাম ছাড়ল তার মাধ্যমে গ্রামীন কৃষির সাথে হস্তশিল্পের বিচ্ছেদ শুরু হল। এই বিচ্ছেদ আজ মহীরুহ রূপ নিয়ে পৃথিবীর বিপাকীয় ফাটল ধরিয়েছে। ধরা যাক পাঁচজন ছুতোর গঞ্জে এসে ব্যবসায়ীকে চেয়ার বেচে দিয়ে গ্রামে ফিরে যেত। কিন্তু ব্যবসায়ী তাদের বোঝালো –তোমাদের আসতে যেতে এত সময় যায় সেই সময়কে বাঁচাতে তোমরা গঞ্জে থেকেই কাজ কর। মালিক একটি সেডেরও ব্যবস্থা করল। এইবার মালিকের দেওয়া সেডের তলায় যখন সকলেই চলে এল, তখন মালিক বলল সবাই মিলে তোমরা একদিনে পাঁচটি চেয়ার বানাচ্ছ। কিন্তু যদি তোমাদের মধ্যে কেহ শুধুমাত্র কাঠ কাটে, কেহ যদি শুধুমাত্র প্লেনিং করে, কেহ যদি শুধুমাত্র ড্রিলিং করে, আর কেহ যদি এসেম্বল করে তাহলে অনায়াসে পাঁচটার জায়গায় আটটা উৎপাদন হবে। শ্রম বিভাজনের মাধ্যমে ব্যবসায়ী উৎপাদন বাড়িয়ে পাঁচজনকে বোঝাল –তোমরা প্রত্যেকে একটি করে মোট পাঁচটার দাম পাবে। আর যে তিনটি উদ্বৃত্ত সেটা আমার হবে। এইভাবে উদ্বৃত্ত শ্রম উদ্বৃত্ত মূল্যে রূপান্তরিত হল। এইবার মালিকরা দেখল: কেহ একজন যদি বিরোধ করে, তাহলে মালিকের পুরো প্রোডাকশনের চেনটাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই মালিক মেশিনের আমদানি করল। সেখানে কাজটি সরল থাকার ফলে মেশিনের উদ্ভাবনের কথা ভাবাও যায়। ফলে কাটিং মেশিন, প্লেনিং মেশিন, ড্রিলিং মেশিনের উদ্ভব হল। এখানে পাঁচজন লোকের প্রয়োজন হলেও কেহ কাজ ছেড়ে দিলেও তাতে অসুবিধা নেই, মালিক নিজেই কাজ চালিয়ে নিতে পারে। এর পর এই সমস্ত কাজ একটি মেশিনে আনা হল। তখন পাঁচজনের জায়গায় একজনের দ্বারা পাঁচজনের অধিক কাজ করা সম্ভব হল। চারজনকে কারখানার বাইরে বার করে দেওয়া হল একজনকে রেখে। এইভাবে কর্মরত শ্রমিকটির উপরে মানসিক চাপ তৈরি করা হল। কারণ বাহিরে যে চারজন বসে আছে যে কেহ তার জায়গায় ঢুকে যেতে পারে। এরপরে এই মেশিনের সাথে যুক্ত হল মেমোরি। অর্থাৎ একবার প্রোগ্রাম করে দিলে মেশিন কাজগুলিকে পরপর করে নেবে। এখন একজনের দ্বারা দশটা মেশিন চালানো সম্ভব হল। ফলে নয় জন ছাঁটাই হল। এইভাবে বুভুক্ষের দল বেড়ে যেতে থাকল। তাই শ্রমিক যত বেশি উৎসাহ ভরে উৎপাদন করবে, তত দ্রুত ছাঁটাই হবে। ফলে গ্রামের তুলনায় একদিকে শহরে জনবসতি বাড়ল, আর গ্রামে জনসংখ্যা কমল। তার কারণ গ্রামীণ শিল্প থেকে শহরে চলে আসা থামল না। উত্তরোত্তর চলেই চলল। যে গ্রামে চাষ হয় সেই গ্রামের মানুষের সংখ্যা কম হওয়াতে মনুষ্য রেচনের থেকে প্রাপ্য দ্রব্য, যা গাছের খাদ্য তা গাছের কাছে গেল না। আর শহরে এই রেচন দ্রব্য গাছের কাছে না ফিরে বর্জ্য হিসাবে শহর দূষিত হতে শুরু করল। গ্রামের জমি উর্বরাশক্তি হারাতে লাগল। এটাই হচ্ছে বিপাকীয় ফাটল, যা বাড়তে বাড়তে আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। জৈব বৈচিত্র নিয়ে সমুদ্রের সাথে স্থলের যে সম্পর্ক ছিল সেখানেই ফাটল ধরেছে। গ্রামীণ জমির উর্বরাশক্তি নষ্ট হওয়ার দরুন কৃত্রিম সার দিয়ে তার ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা হল। কিন্তু এই কৃত্রিম সার গাছ ধারণ করে মাত্র ১৮% বাকিটা সমুদ্রে চলে যাচ্ছে। ফলে সমুদ্রের তলায় অ্যালগিদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এত বেশি হচ্ছে যে, সমুদ্রের মধ্যে আলো প্রবেশ করতে পারছে না। শ্যাওলা জাতীয় গাছেরা সমুদ্রের তলায় মরে যাচ্ছে। আর প্রানীকুল মারা যাচ্ছে এই অক্সিজেনের অভাবে। সমুদ্রের থেকে ৬৫ শতাংশ অক্সিজেন স্থলে আসত তাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এইরূপ চারশোটি ডেডজোন তৈরি হয়েছে সমুদ্রের তলায়, যেখানে সমস্ত মাছেরা মারা যাচ্ছে। ফলে শ্রমবিভাজনের মধ্যে দিয়ে যে পণ্য অর্থনীতির বিকাশ গ্রামের কৃষির সাথে শিল্পের বাধন ভেঙ্গে দিল, তাই পরিবেশ ধ্বংসের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ালো।

এর থেকে মুক্তির পথ

এর থেকে মুক্তির পথ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দেখালেও পুঁজিবাদী অর্থনীতি তাকে প্রয়োগ করতে পারছে না। তার কারণ, তাতে পণ্য-অর্থ-পুঁজির জীবন্তরূপ শুকিয়ে মারা যাবে। এই প্রযুক্তির নাম বন্ডগ্রাফ প্রযুক্তি। অর্থাৎ শ্রমবিভাজন যেমনি সবাইকে বিভাজিত করেছে, এখন দরকার তাদের সংযোজন ঘটানো। এটা সম্ভবও, তার কারণ গনিতশাস্ত্র থেকে আমরা জেনেছি, ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন স্তরে মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, কেমিক্যাল, সিভিল প্রযুক্তিকে জুড়ে নেওয়া যায় একটি ইকুয়েশনের মাধ্যমে। এর ভিতর দিয়ে সমস্ত কারখানার সাথে পাওয়ার প্ল্যান্টকে জুড়ে নিয়ে সারাদেশের উৎপাদনকে একটি ইন্টিগ্রেটেড গ্রিডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেখানে মানুষের কাজ থাকবে মাত্র মেটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট করা অর্থাৎ এই মুহূর্তে পৃথিবীর মানুষের প্রয়োজন কত, প্রকৃতিকে মেরামতির জন্য প্রয়োজন কত তা নির্ধারণ করা। আর তাকে প্রোগ্রামিং-এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট কারখানায় পৌঁছে দেওয়া এবং উৎপাদিত বস্তুকে ঠিক ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ পৃথিবীর উৎপাদন ও পুনরুৎপাদনকে একটি নির্দিষ্ট গ্রিডের অধীনে নিয়ে এসে সুপরিকল্পিতভাবে মানুষের ও প্রকৃতির প্রয়োজন মিটিয়ে মানুষের সাথে প্রকৃতির বিপাকীয় ফাটল দূর করা। কিন্তু তাহলে বিনিময় থাকবে না, পণ্য থাকবে না। আর তা না থাকলে অর্থ থাকবে না, অর্থ না থাকলে পুঁজি থাকবে না। কর্পোরেট মালিকরা দু’দিনে ভিখারিতে পরিণত হবে। অথচ এরাই আজ পৃথিবীকে চালাচ্ছে।

সারা বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদ বুর্জোয়া পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আর গণতন্ত্রকে রক্ষা করে পুঁজিবাদী পথে চলতে গেলে পুঁজি প্রকৃত পুঁজি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ফিকটিসাস হয়ে যাচ্ছে, রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্য দিয়ে এমন এক সাম্রাজ্য গড়ে উঠছে যেখানে সাধারণ মানুষের স্থান নেই। এই সময়ে বিকল্প হিসাবে বেলেমী ফস্টার কি বলছে দেখা যাক – বিশ্বব্যাপী ফিনান্স পুঁজি তার স্বাধীন চলাচলের জন্য যে commodity value chain গড়ে তুলেছে তাকে উচ্ছেদ করে ‘The needs of the entire chain of human generation’ গঠন করতে হবে।

তাই ব্যবহারযোগ্য বস্তুর সাথে মানুষের সম্পর্ককে না পাল্টালে এটা সম্ভব নয়।

প্রথমত: ব্যবহারযোগ্য বস্তু আর মানুষের প্রয়োজন মেটাবার জন্য তৈরি হয় না, তৈরি হয় পুঁজির প্রয়োজন মেটাবার জন্য। অর্থাৎ তার মুনাফার হার বাড়াবার জন্য। এই কারণেই যার হাতে অর্থ আছে তার জন্য উৎপাদন হয়, যার হাতে অর্থ নেই তার জন্য উৎপাদন হয় না। একদিকে প্রাচুর্য আর একদিকে অনাহার। ফলে মানুষের মধ্যে যে মেটাবলিক সম্পর্ক থাকে তা ভেঙে পড়ছে। যেখানে প্রাচুর্য সেই শহরে আবর্জনা তৈরি হচ্ছে আর যেখানে অনাহার সেই গ্রামে জমি তার উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে। আর আজ এই সম্পর্কটা এতটাই নগণ্য হয়ে পড়ছে তাকে গণতন্ত্র দিয়ে ঢেকে রাখা যাচ্ছে না, ফ্যাসিবাদ দিয়ে গায়ের জোরে এই বৈষম্যমূলক অনুশাসন চালাতে হচ্ছে।

তাই উৎপাদিত বস্তুর পণ্যরূপ ঘোচাতে হলে প্রথমেই যে বিরোধ সামনে আসে তাহল –শ্রম বিভাজনের তৈরি বিরোধ। যেখান থেকে বিনিময়ের জন্ম হয়, অর্থের জন্ম হয়, পুঁজির জন্ম হয়, ফিনান্স পুঁজির রাজত্ব তৈরি হয়। নারী-পুরুষ শ্রম বিভাজন হচ্ছে প্রথম উৎসস্থল, তারপর শহর-গ্রাম হচ্ছে শ্রম বিভাজনের আর একটি কুফল। যেখান থেকে বিপাকীয় ফাটল চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছে গেছে। এর সাথে যুক্ত হয়ে আছে কায়িক শ্রম ও মানসিক শ্রমের বিভাজন।

আজকের মানবসভ্যতার কাছে সেই প্রযুক্তিও আছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বন্ডগ্রাফ প্রযুক্তি দ্বারা এই সমস্ত শ্রম বিভাজন দূর করা যায়। এই শ্রমবিভাজন একদিকে যেমন দূর করতে হবে তেমনি একদিকে মানুষের প্রয়োজন ও প্রকৃতির প্রয়োজনকে এক সূত্রে বাঁধতে গেলে যে বিভাজনের দরকার হয় অর্থাৎ জীন প্রযুক্তি তারও বিকল্প আজ হাজির। তাহলে তা রূপায়িত হচ্ছে না কেন? হচ্ছে না, তার কারণ এই পুঁজিবাদী অনুশাসন মানুষের সংস্কৃতিকে দখল করে রেখেছে। অর্থাৎ যা প্রকৃত তাই হয়েছে অপ্রকৃত, আর যে অপ্রকৃত সেই হচ্ছে প্রকৃত। মানুষ ও প্রকৃতির সোজাসুজি সম্পর্ক যেটা প্রকৃত তাকেই  বিকাশ ঘটাতে হবে, সেটাই বাঁচার পথ। কিন্তু মানুষ ভাবছে পণ্য, অর্থ, পুঁজি ছাড়া মানুষ বাঁচবে না। এই ভাবনাই মানুষের বেঁচে থাকার প্রকৃত বাস্তবতাকে ধংস করছে।

এই চিন্তা শ্রমের জগতকে কিভাবে ধ্বংস করছে দেখা যাক। মানুষ তার আত্মরক্ষার জন্য অর্থাৎ প্রাণীগত প্রয়োজন মেটাবার জন্য শ্রমের জগতে প্রবেশ করলেও শ্রম করতে গিয়ে সে যত না প্রকৃতিকে পরিবর্তন করে তার থেকে বেশি পরিবর্তন করে নিজেকে, যে পরিবর্তন তাকে উন্নত আত্মপ্রকাশের স্থানে নিয়ে যায়। শ্রমের এই বিকাশের জন্যই একদিকে মানুষ আবিষ্কার করেছে ভাষা, গান, সাহিত্য, প্রেম আর একদিকে বিজ্ঞানের উন্নত সব শাখা, যা মানুষকে আরো গভীরে নিয়ে গেছে প্রকৃতির গর্ভে, যেখানে দাঁড়িয়ে তার মধ্যে এমন এক উন্নত বোধ তৈরি হয় যা মনুষ্য সমাজ ও প্রকৃতির মধ্যে এক উন্নত সম্পর্কের জন্ম দেয়। যেখানে সে মনে করে চামড়ার মধ্যে আবদ্ধ তার ক্ষুদ্রতর দেহটা হচ্ছে তারই বৃহত্তর দেহ প্রকৃতিরই একটি ক্ষুদ্র অংশ। তাই সে অনায়াসে উপলব্ধি করে যে, এই বৃহত্তর দেহটি ঠিক থাকলে তার ক্ষুদ্রতর দেহটিও ঠিক থাকবে। কিন্তু এই সম্পর্কের উন্নতি হল না কেন? তার কারণ শ্রম ও প্রকৃতির মধ্যেকার সম্পর্ক তখনই এই পথে বিকশিত হবে যদি শ্রম থেকে অর্জিত উদ্বৃত্ত অংশ এই সম্পর্কের বিকাশের জায়গায় ব্যায়িত হয়, তখন শ্রম তার বৃহত্তর সত্তাকে ক্ষুদ্রতর সত্তার সাথে যোগসূত্র ঘটাতে পারে উন্নত প্রযুক্তির বিকাশের মাধ্যমে। তবেই শ্রমিকের সত্তার রিয়েলাইজেশন হয়, তা না হয়ে শ্রমিকের সত্তা নিঃশেষ হয়। আর অর্থের মালিক, যে প্রকৃতির সাথে শ্রমের মাধ্যমে যুক্ত নয়, তার অনুৎপাদক সত্তার রিয়েলাইজ হয়, এই রিয়েলাইজ হওয়া মানে তার অর্থের যে বিমূর্ত মূল্য তারই বৃদ্ধির হার বাড়ায়। তাই এই বিমূর্ত দর্শনকে ধ্বংস না করলে মানুষ ও প্রকৃতির মূর্ত সম্পর্কের বিকাশ হবে না।

কিন্তু যে পারে বিমূর্ত দর্শনকে ধ্বংস করতে সেই শ্রমিকশ্রেনী আজ পৃথিবীব্যাপী বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত কিছু আন্দোলনের মধ্যেই আটকে থাকছে। কিন্তু পাশাপাশি পৃথিবীব্যাপী প্রকৃতিকে ঘিরে বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়ের দল, ঠিক যেন রবীন্দ্রনাথের বলাই, তারাই আজ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। নারীরাও আজ প্রতিবাদের পথে, দিল্লির রাস্তায় ভারতবর্ষের সাতজন প্রতিভাবান নারী যারা ভারতবর্ষের মুখ উজ্জ্বল করেছে বিদেশের মাটিতে অলিম্পিকে পদক জয়ের মাধ্যমে, তারা তাদের উপর যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিচারের দাবিতে সরকারের দরবারে পড়ে রইল বহুদিন  পুলিশি নির্যাতন, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে। এতদ্বসত্বেও সরকার কর্ণপাত করল না। এখন সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী নারীদের বিরুদ্ধে সমানে মিথ্যা প্রচার ভারতবর্ষব্যাপী করে বেড়াচ্ছেন ভোটের জন্য। আসলে ফ্যাসিবাদ নারীদের দাবি মানতে পারেনা। ভারতবর্ষের মুখ উজ্জ্বল করা নারীদের দিল্লির রাস্তায় আন্দোলন করা এর প্রকৃষ্ট  উদাহরণ।

তাই পৃথিবীব্যাপী যে ফ্যাসিবাদের উত্থান হচ্ছে তা মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করবে। যত মানুষ ধর্ম, বর্ণ, জাত-পাতের পরিচয়ে আবদ্ধ থাকবে তত এই ফ্যাসিবাদের জমি শক্ত পোক্ত হবে। কিন্তু যদি মানুষ ভাবে এই পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাদের সকলের বৃহত্তর দেহ বা সত্তা তাকে না বাঁচালে কেউই বাঁচবো না, তবেই এই জাত-পাত ধর্ম ও বর্ণের মতো সংকীর্ণ পরিচয়গুলির বাইরে বেরিয়ে আসবে। তাই বিশেষ সংকীর্ণ পরিচয়গুলিকে ধ্বংস করে মানুষ যখন প্রকৃতিকে ঘিরে আন্তর্জাতিক পরিচয়ে উত্তীর্ণ হবে তখনই ফ্যাসিবাদের পতন ঘটবে। মৃত এই পুঁজিবাদকে যতই চিনের মতন পচনশীল কম্যুনিস্টরা বাঁচাবার চেষ্টা করুক না কেন, কিছুতেই পারবেনা, নতুন কমিউনিস্টদের জন্ম হচ্ছে যা ফ্যাসিবাদকে শেষ করে পৃথিবীকে চিরতরে মুক্ত করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top