লাদাখ সহ সমগ্র হিমালয় ও হিমালয়জাত নদীর বিপর্যয় তামাম বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এগিয়ে দিচ্ছে

Manisha Mondal | ThePrint

সন্তোষ সেন
সোনম ওয়াংচুক পরিবেশ আন্দোলনে শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত এক নাম। যে আন্দোলন তিনি গড়ে তুলেছেন লাদাখে তা অন‍্য অঞ্চলের পরিবেশ আন্দোলনকেও শক্তিশালী করবে, হিমালয় ছাড়িয়ে সে বার্তা পৌঁচচ্ছে দেশে-দেশে। হিমালয়সহ সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্র বাঁচাতে ও লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ট তপশিলের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে লাদাখবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। এই আন্দোলনের মধ‍্য দিয়ে তাঁদের অবদমিত গণতান্ত্রিক অধিকারকে মুক্ত করার দাবী তাঁরা তুলেছেন। কর্পোরেট স্বার্থে নয়, লাদাখের মানুষের স্বার্থে পরিবেশ উপযোগী উন্নয়নের অধিকার নিশ্চিত করার জন‍্যই তাঁরা গণতান্ত্রিক শাসনের অধিকার চাইছেন। অথচ পূর্ব-প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার সংবেদনহীন ও সম্পূর্ণ নীরব। এই আন্দোলনের মধ‍্যে দিয়ে পরিবেশ-গণতন্ত্র-সংবিধানের আন্তর্সম্পর্ক উপস্থিত হচ্ছে দেশ জুড়ে। লাদাখে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জারি আছে কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক আল্যায়েন্স, এপেক্স বডি ও সোনমজীর নেতৃত্বে হাজার হাজার সাধারণ লাদাখবাসীকে সাথে নিয়ে। সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা লড়াইয়ের মাঠ ছাড়বেন না বলে ঘোষণা করেছেন। মনে রাখতে হবে, হিমালয় যুক্ত হয়ে আছে ভারতের ঐতিহ‍্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে এবং সমগ্র দেশের জলবায়ু ও ঋতুচ্ছন্দের উপর তার গভীর প্রভাব অবিংসবাদিত। তাই এই আন্দোলনের সমর্থনে পশ্চিমবাংলার নানা প্রান্তে পরিবেশ সংগঠন, সামাজিক আন্দোলনের সংগঠন সহ প্রচুর মানুষ জুড়ে যাচ্ছেন, পথে নামছেন। এই আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত হয়েছে ‘ফ্রেন্ডস অফ হিমালয়ান’ যা হিমালয়ে অবস্থিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের পঞ্চাশটির বেশী সংগঠনের যৌথ মঞ্চ। হিমালয়কে রক্ষা করতে আজ সকলে মিলেই আওয়াজ তুলছেন।
কীভাবে হিমালয় ও দেশের ছোট বড় নদীগুলো বিপন্ন হচ্ছে, সর্বস্বান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ, বিদ্যুৎ শক্তির সমাধান কোন পথে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় হিমালয়ের গুরুত্ব, মানবাধিকার নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক রায়: এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে আলোচনায় আনার চেষ্টা করব এক এক করে।

শান্ত নিরীহ অতিথি পরায়ন লাদাখবাসী কেন আন্দোলনের পথে

লা মানে গিরিপথ আর দাখ মানে দেশ, ঘন নীল আকাশের পটভূমিকায় ভেসে থাকা সাদা মেঘের সোনালি, হলুদ বাদামি রঙের পর্বতের সারির মাঝখান দিয়ে কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, আর তিব্বতের দিক থেকে অসংখ্য গিরিপথ এসে পৌঁছেছে লাদাখের নানা নদী উপত্যকায়৷ গিরিপথের দেশ লাদাখ প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে ভরপুর। অসংখ্য উচ্ছ্বল স্রোতধারা মিশে মিশে গড়ে ওঠা নদী, পর্বতের গায়ে ঝুলে থাকা গুম্ফা, নীল জলের সুবিশাল হ্রদের বিস্তার আর সহজ সরল মানুষদের অতিথিপরায়নতা লাদাখের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।
পাকিস্তান ও চীনের সীমান্তবর্তী এলাকায় লাদাখ উপত্যকা ১৫০০০ ফুট উপরে অবস্থিত। এখানে বছরে ৩০০দিনেই সূর্যালোকের কোন অভাব ঘটে না। কিন্তু এই উপত্যকার প্রায় ৯৭ শতাংশ অঞ্চল হিমালয়ের বৃষ্টিহীন অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এখানে জলের উৎস একমাত্র গলিত হিমবাহের ধারা। অসমতল পাহাড়পৃষ্ঠে চাষবাসের যেটুকু জায়গা, তা প্রায়শই চাপা থাকে তুষারে, মাইনাস ৩৫°সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। এখানকার মোট জনগণের ৯০ শতাংশের বেশি আদিবাসীজন। তাঁদের জীবিকা মূলত পশুপালন, ভেড়ার লোম থেকে পাশমিনা চাদর তৈরি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর করে কোনভাবে যাপনের ব্যবস্থাপনা। আর ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রির দৌলতে নব্য ট্যুরিস্টদের আনাগোনা। তুষারশুভ্র পাহাড়, জঙ্গল, তৃণভূমি আর হিমবাহের দেশ লাদাখের বর্তমান প্রাকৃতিক অবস্থাটা কেমন? এককথায় মর্মবিদারক।
প্রথমত: জনগণের প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ সামরিক সেনা এই উপত্যকাকে দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছে জাতীয় সুরক্ষার নামে। স্বাভাবিকভাবেই সামরিক কার্যকলাপে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে গেছে। ফলে বায়ুদূষণ, স্থানীয় উষ্ণতা ও পরিবেশ পরিস্থিতির আকস্মিক বদল পশুপালকদের অত্যন্ত সমস্যায় ফেলেছে। দ্বিতীয়তঃ লাদাখের ‘ফে উপত্যকা’র ৫,০০০ মেগাওয়াট সৌর প্রকল্পের রূপায়ণে ২০,০০০ একর তৃণভূমি কর্পোরেট বাহিনী দখল করে নিয়েছে এবং সেই বিদ্যুৎ পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আহুতি দিতে হবে প্রায় ১৫৭ বর্গকিলোমিটার বনভূমিকে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আর একটি সমস্যা। আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন –মেষপালকরা আগে যতটা অঞ্চল পর্যন্ত যেতে পারতেন, বর্তমানে তার ১৫-২০ কিমি আগেই থমকে যেতে হচ্ছে চিনা বাহিনীর জবরদখলের কারণে। তৃতীয়ত: উষ্ণায়নের কারণে ধরণীর গড় তাপমাত্রা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বেড়ে যাওয়ার ফলে উত্তরাখন্ড, হিমাচল প্রদেশ থেকে কাশ্মীর-লাদাখ পর্যন্ত বরফের চাদরের আস্তরণ দ্রুত গলে যাচ্ছে। পিছিয়ে যাচ্ছে গ্লেসিয়ার অঞ্চল। বরফ আচ্ছাদিত অঞ্চলের পশ্চাদপসরণ ঘটছে অতি দ্রুত গতিতে। হিমবাহ গলে পিছিয়ে যাওয়ার ফলে নদী বিধৌত কাশ্মীর ও লাদাখ শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হবে। অন্যদিকে ভূউষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে হিমালয়ের বাস্তুতন্ত্রে। হিমবাহ গলার পাশাপাশি বাড়ছে বৃষ্টিপাত, প্লাবন-ধস। আন্তর্জাতিক মৌসম সংস্থার গবেষণায় জানা যাচ্ছে –বিগত ১০ বছরে লাদাখে গড় বৃষ্টিপাত ৩০ মিলিমিটার থেকে বেড়ে ১৪০ মিলিমিটারে দাঁড়িয়েছে। এই বাড়তি বৃষ্টি ধারণ করার ক্ষমতা সংবেদনশীল পাহাড়ি মাটিতে নেই। চতুর্থত: কাশ্মীর ও লাদাখ অঞ্চলে সন্ধান মিলেছে লিথিয়ামের মতো রেয়ার আর্থ এলিমেন্টের। যার ওপর শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে কর্পোরেট বাহিনীর। লিথিয়াম দিয়ে তৈরি হবে সৌরবিদ্যুতের ব্যাটারি। বিকল্প ও সবুজ শক্তির গালভরা প্রচারের ঢক্কা নিনাদে লুঠ হয়ে যায় হেক্টরের পর হেক্টর চারণভূমি। পঞ্চমত: ২০১৯ সালে ভারত সরকারের তরফে কাশ্মীরকে ভেঙ্গে একদিকে জম্বু কাশ্মীর, অন্যদিকে লাদাখ এই দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচন প্রক্রিয়া সংঘটিত হলেও লাদাখ থেকে যায় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবেই। যেখান থেকে জনগণের কোন নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। ভারত সরকার বারবার কথা দিলেও এবং ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’র ম্যানিফেস্টোতে উচ্চকিত কণ্ঠে ঘোষিত হলেও লাদাখকে সংবিধানের ২৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলত স্থানীয় অধিবাসীদের হাতে কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। অঞ্চলের উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের স্বরূপ সম্পর্কে, সর্বোপরি হিমালয়ের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার প্রশ্নে তাঁদের মতামত দেওয়ার কোনরকম কোন সুযোগ নেই। উপরন্তু ৩৭০ এর রক্ষাকবচ তুলে দিয়ে লাদাখ ও কাশ্মীরের প্রাকৃতিক উত্তরাধিকারকে কর্পোরেটের মৃগয়াক্ষেত্রে পরিণত করা হল। ষষ্ঠত: ২০১৯ সালে বিজেপির নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে পরিবেশ হন্তারক বেশ কয়েকটি প্রকল্পের স্পষ্ট উল্লেখ ছিল। যেমন, গুগা উপত্যকায় জিওথার্মাল প্রকল্প, এনটিপিসি’র হাইড্রোজেন শক্তি প্রকল্প; সেয়ক, দূর্বুক, তেরিসা-থইস সহ সিন্ধু নদীর উপর সাতখানা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং উৎপন্ন বিদ্যুৎ হিমাচল প্রদেশ-পাঞ্জাব হয়ে হরিয়ানায় গ্রিডে পরিবহন করার পরিকল্পনা; স্বদেশ দর্শন-২ এর অধীনে লেহ-লাদাখ-কার্গিল এর নগরায়ন তথা পর্যটন প্রকল্প এবং সর্বোপরি বোরাক্স, গোল্ড, গ্রানাইট ও ক্যালসিয়াম কার্বনেট খনিজ উত্তোলন।
বর্তমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের সাথে এই প্রকল্পগুলি রূপায়িত হলে আদিবাসী মানুষজন নিজেদের জমিজমা, বাস্তুভিটে, সমাজ সংস্কার, সংস্কৃতি: সবকিছুই বহিরাগত বণিক তথা দেশি-বিদেশি বহুজাতিক কর্পোরেটের লোভ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও মুনাফার করাল গ্রাসের কাছে বন্ধক রাখতে বাধ্য হবেন। ভারত সরকারের তথাকথিত উন্নয়নী মডেলে স্থানীয় মানুষের মতামত, হিমালয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী, কোন কিছুরই কোন মূল্য নেই। কতিপয় মানুষের কায়েমী স্বার্থে গড়ে ওঠা এই উন্নয়ন পরিকল্পনার কাঠগড়ায় হিমালয় ও হিমালয়জাত নদীর মৃত্যু সহ উপত্যকাবাবাসীর জীবনযাত্রা, সমুদ্রোপকূল ও সমতলের মৎস্যজীবীদের দৈনন্দিন জীবনধারা সমস্ত কিছু বলিপ্রদত্ত হচ্ছে। ষষ্ঠ তফশিল বা সমতুল কোন রক্ষাকবচ না থাকলে লাদাখে কর্পোরেট মাফিয়াদের উন্নয়ন শুধু বড় বড় হোটেল, রিসর্ট আর চার লেনের মহাসড়কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। অত্যন্ত সংবেদনশীল লাদাখে খনিজ পদার্থ উত্তোলন শুরু করলে ইতিমধ্যেই বিশ্ব উষ্ণায়ণের কুফলে আক্রান্ত পরিবেশ আরও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বিপন্ন হবে তুষার চিতা, তিব্বতি এন্টেলোপ হরিণ, পাহাড়ি ছাগল, ভেড়া, চমরীগাই, পিকা ইঁদুর, পাহাড়ি মৌমাছি ও প্রজাপতির মতো অসংখ্য বিরল প্রজাতির প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য, বিপন্ন হবে আমাদের ভবিষ্যৎ৷

Pangong Lake

যে পথ ধরে আন্দোলন চলছে

উল্লিখিত বিষয়গুলি স্বভাবতই স্থানীয় জনজাতিদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও জীবিকা নির্বাহের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। আর এই নিয়েই লাদাখের আপামর জনগণ দীর্ঘদিন ধরে লড়াইয়ের ময়দানে হাজির। ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি পাঁচ দিনের অনশন করেন সোনমজী। ‘ভয়েস অফ আমেরিকা’কে স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানিয়ে দেন –সংবিধানের ষষ্ঠ তপশিল মোতাবেক স্থানীয় অধিবাসীদের হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা তুলে দেওয়ার পাশাপাশি লাদাখ ও কার্গিলের জন্য আলাদা সংসদীয় আসন মঞ্জুর করতে হবে। সাথে তিনি এটাও বলেন, গ্লেসিয়ারের পশ্চাদপসরণ ঠেকাতে এবং সমগ্র উত্তর ভারতের জলকষ্ট দূরীকরণে এই পদক্ষেপ একান্ত জরুরী। এরপর সিন্ধু দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। দেশের নানান মন্ত্রী পারিষদ, এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে তাঁরা দফায় দফায় আলোচনা চালিয়ে গেছেন। কাকস্য পরিবেদন। বাধ্য হয়েই এ বছর ৬মার্চ থেকে মাইনাস ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় খোলা আকাশের নিচে ২১ দিনের অনশন করেন সোনম ওয়াংচুক সহ উপত্যকার কয়েক শত মানুষ। লাদাখ কলেজের ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে এই অনশন সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। নেতৃত্বে এগিয়ে আসে এপেক্স বডি ও কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক আল্যায়েন্স।
এরই ধারাবাহিকতায় ৭এপ্রিল ১০,০০০ উপত্যকাবাসী চীন-ভারত সীমান্তে ‘পাশমিনা অভিযান’ ঘোষণা করেন। শুরু হয়ে যায় কেন্দ্রীয় সরকারের সাজো সাজো রব। সামরিক বাহিনী, সাঁজোয়া গাড়ি রাস্তা দখল করে নেয়। ১৪৪ ধারা জারি করে আন্দোলনকারীদের ধরপাকড় চলে, নানাভাবে তাঁদের বিব্রত করা হয়। অশান্তি, ঝামেলা এড়াতে পাশমিনা মার্চ শেষ মুহূর্তে স্থগিত ঘোষণা করা হলেও সত্যাগ্রহ আন্দোলন চলতে থাকে জোরকদমে। লাদাখের মহিলা ব্রিগেডের টানা দশ দিনের অনশন আন্দোলন, তারপর যুবা বাহিনীর দশ দিনের অনশন এবং বর্তমানে বৌদ্ধ ভিক্ষুক, লামারা অনশন মঞ্চে। সোনম ওয়াংচুক আবারও অনশন আন্দোলনে হাজির হয়েছেন। অনশন মঞ্চ থেকে ভিডিও বার্তায় তাঁর প্রতিবাদের স্বর ছড়িয়ে পড়ছে দেশের হাজার লক্ষ মানুষের কাছে। লাদাখের মানুষজন ক্ষোভে ফুঁসছেন। তাঁদের বক্তব্য –এতো সৈন্য সামন্তের সমাহার তো মূলত ব্যবহৃত হচ্ছে দেশবাসীর আন্দোলন রুখতে, অথচ লাদাখ সীমান্তে চিনা বাহিনী প্রচুর জমি দখল করে নিলেও সেদিকে ভারতীয় বাহিনীর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। হিমালয় বাঁচাতে ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর দমন নীতির বিরুদ্ধে দেশের নানান প্রান্তে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংঘটিত হচ্ছে। তোমরা একা নয়, তোমাদের পাশে আমরাও আছি: এই বার্তা ছেয়ে ফেলছে সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় পাতায়। দাবি পূরণ না হওয়ায় ১৭ এপ্রিল আবারও পাশমিনা অভিযানের ডাক দেওয়া হলে কেন্দ্রীয় বাহিনী আগের মতোই ঝাঁপিয়ে পড়ে এই মার্চ রুখতে। সোনমজী জানালেন –আমরা পাশমিনা মার্চ আবারও স্থগিত রাখছি, কিন্তু আন্দোলন চলতেই থাকবে।

হিমালয়বাসীর বিপন্নতা কোন পথ ধরে

লাদাখের পর আসি যোশীমঠের কথায়। কোন এক সময়ে প্রবল ভূমিকম্পের ফলে পাহাড় থেকে মাটির যে ধস নেমে আসে, জমাট না বাঁধা সেই ঝুরো মাটির ভগ্নাবশেষের ওপর ৬১৫০ ফুট উপরে পাহাড়ের ঢালে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় গড়ে তোলা হয় যোশীমঠ শহরটিকে। নৈনিতাল, উত্তরকাশী, চম্পাবত –উত্তরাখণ্ডের এই শহরগুলোও গড়ে উঠেছে ভূমিধসের ফলে জমা হওয়া আলগা মাটির ওপর। ফলতঃ প্রকৃতির নিয়ম মেনেই শহরের নিচে এখনো রয়ে গেছে প্রচুর পরিমাণে আলগা বালি, পাথর, দুর্বল শিলার স্তূপ। এই কারণেই ভূমিকম্প প্রবন এই অঞ্চলে ভারী নির্মাণকাজ কোনভাবেই বিজ্ঞাসম্মত নয়। কিন্তু জনবসতি গড়ে ওঠা এবং দেবভূমির বদ্রীনাথ, হেমকুন্ড সাহিব, শঙ্করাচার্য মন্দির অঞ্চল ধার্মিক ও পর্যটকদের নানান সুখ সুবিধে সহ আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য প্রকৃতির নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিত ভাবে বড় মাপের পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজে হাত দেওয়া হয়। তাল মিলিয়ে পর্যটন শিল্পের রমরমাও বাড়তে থাকে। অন্যদিকে যোশীমঠে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের টানেল তৈরির জন্য পাহাড় ফাটাতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এই বিস্ফোরণের ফলে বারবার কেঁপে ওঠে যোশীমঠ সংলগ্ন অঞ্চল। উত্তরাখণ্ডের যত্রতত্র ভুইঁফোড়ের মতো গজিয়ে ওঠা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়েছে পাহাড় ও গাছপালা কেটে হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও বাড়ি তৈরী, অলকানন্দার দুপারে নুড়িপাথর ও মাটি তুলে নেওয়া, নদীর স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করে নদীর পাড় বরাবর রাস্তা নির্মাণ, ইত্যাদি। মাটি পাথর বালির বদলে পুরো শহরটাকে কংক্রিটের জঙ্গলে ঢেকে দেওয়ার ফলে জলনিকাশি ব্যাবস্থাও পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। পুবে ধাকনালা, পশ্চিমে করমনাশা, উত্তরে অলকানন্দা, দক্ষিণে ধৌলিগঙ্গা –এই চারটি প্রাকৃতিক জলনির্গমন প্রণালী উন্নয়ন ও নগরায়নের চাপে অবরুদ্ধ। ফলে পাহাড় থেকে আসা জল বা বৃষ্টির জল মাটির ভিতর প্রবেশ করতে না পারায় তা ভূভাগের উপরিস্তরে ও মাটির নিচে বাড়তি চাপ তৈরি করছে।
১৯৭০ ও ১৯৭৮ সালে ভাগীরথী ও অলকানন্দার প্রবল বন্যা, ১৯৮৩ সালের কেদারনাথ কাণ্ড, ২০১৩ সালে চামোলি গ্রাম সংলগ্ন অঞ্চলে ব্যাপক বিপর্যয় ও প্রাণহানি এবং ২০২১’র হিমবাহ গলে গিয়ে ব্যাপক বিপর্যয়ের ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যোশীমঠ সংলগ্ন একাধিক অঞ্চলে প্রবল ফাটল ও বিপর্যয়। প্রকৃতির এইসব প্রলয় নাচন মানবসভ্যতার জন্য একেকটি অশনি সংকেত। অথচ একই ধারায় ও গতিতে হিমাচলপ্রদেশ হয়ে সিকিম, দার্জিলিং এবং উত্তরে লাদাখ পর্যন্ত নগরায়ন, উন্নয়ন ও ট্যুরিজম ইন্ড্রাস্ট্রি গড়ে তোলার অবৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে ভারত সরকার।
বয়সে নবীন ও ভঙ্গুর হিমালয় সংলগ্ন এলাকায় বিভীষিকাময় দুর্যোগগুলোর মূলে মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলোই সবচেয়ে বেশি করে দায়ি। হিমালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সবুজে মোড়া সুউচ্চ বনানী, নদীর স্বাভাবিক গতিপথ সহ তামাম জীববৈচিত্র্য অটুট থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিভীষিকা ও ক্ষতিসাধন ক্ষমতা অনেকটা কম হয়। বাস্তবে ঠিক উল্টোটা হল। অবৈজ্ঞানিক ও অপরিকল্পিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, উন্নয়ন, নগরায়ন এবং ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রির ঠেলায় নদীর বুকে ও পাহাড়ের কোলে জমা হতে থাকল যতসব নির্মাণকার্যের কঠিন বর্জ্য, হল চারধামে যাওয়ার চার লেনের রাস্তা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে –বিগত কয়েক বছরে উত্তরাখণ্ডের কয়েক হাজার প্রাকৃতিক ঝর্না স্রেফ উধাও হয়ে গেছে। এসবই হল সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে।
অথচ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প যে পরিবেশ সহ স্থানীয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করবে, তা বুঝতে পেরেই গ্রামবাসীরা এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রতিবাদে মুখরিত হয়েছেন প্রথম থেকেই। আদালতের স্পষ্ট রায় ছিল –“হিমালয়ের একেবারে ভিতরে নদীকে অনেকটা পথ ঘুরিয়ে নিয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ-কেন্দ্র স্থাপন করলে তা পাহাড়ের সামগ্রিক পরিবেশ ধ্বংস করে বিপর্যয় ডেকে আনবে”। এই রায়কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নানান পন্থা-পদ্ধতি অবলম্বন করে নির্মাণকাজ ও উন্নয়নের ঢক্কা-নিনাদ বেজেই চলেছে। আসলে কর্পোরেট ও তাদের সেবাদাস সরকারগুলোর একটাই বাণী: যেকোন মূল্যে ছুটিয়ে নিয়ে চলো সব গিলে খাওয়া উন্নয়নের রথ আর পুঁজির মুনাফা বৃদ্ধির হার। উন্নয়ন ও নগরায়নের মহাযজ্ঞ প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম ও ভারসাম্যের বিপরীতে কাজ করছে, ফলে এইসব পরিবর্তনগুলোকে প্রত্যাবর্তনীয় চক্রের মধ্যে নিয়ে গিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে দিনদিন।

হিমালয়ের বুকে বৃহৎ জলবিদ্যুৎ ও সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিপদ

প্রথমেই স্পষ্ট করে নেওয়া যাক যে, কয়লা পুড়িয়ে তাপবিদ্যুৎ কারখানা থেকে নির্গত কালো বিষাক্ত গ্যাস, কয়লার গুঁড়ো বায়ুদূষণ ও জলের দূষণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাতাসে গ্রীনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রভূত পরিমাণে এবং এর হাত ধরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রাও বাড়ছে চড়চড় করে। খুব সঙ্গত কারণেই জীবাশ্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে পরিবেশবিদ, বিজ্ঞানী ও পরিবেশ মেরামতির দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী ও কিশোর-যুবা বাহিনীর বিক্ষোভ প্রতিবাদ জোরদার হচ্ছে। বিকল্প শক্তির উৎস হিসেবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সেই অর্থে কোন আপাত দূষণ ঘটায় না। কিন্তু যেটা আমাদের বুঝতে ও আলোচনার বৃত্তে আনতে হবে: কাদের স্বার্থে এবং কিসের বিনিময়ে হিমালয়ের কোলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের এত ঘনঘটা। ভারতের একচেটিয়া পুঁজির মালিকরা চায় প্রাকৃতিক সম্পদ ও সস্তা শ্রম ব্যবহার করে সরকারের সক্রিয় সমর্থন ও সাহায্যে দেশের প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ তৈরি করে প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশে উচ্চ দামে বিক্রি করে মুনাফার টাকা গুছিয়ে নিতে। তাই বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের সমস্ত হুঁশিয়ারি ও সতর্কবার্তা স্বত্বেও পাহাড় ফাটিয়ে, টানেল তৈরি করে এবং নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে হিমালয়ের বুকে বড় বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির প্রকল্প চলছে মহা সমারোহে। এবার সৌরশক্তির অন্দরে ঢুঁ মারা যাক।
সৌরবিদ্যুৎ কি নির্বিষ এক উৎপাদন প্রক্রিয়া? সৌরশক্তির ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে গ্রীনহাউস গ্যাস বাতাসে মেশে না বলে একে ‘ক্লিন ফুয়েল’ বলা হয়। কিন্তু অন্য বিপদের দিকগুলোও ভাবা দরকার। অর্ধপরিবাহী সিলিকন দিয়ে বড় বড় প্যানেল তৈরি করতে লাগে প্রচুর পরিমাণে ক্যাডমিয়াম এবং লেড, যা আসলে পরিবেশকে দূষিতই করে। এছাড়া আছে গ্যালিয়াম-আর্সেনাইড, হাইড্রোক্লোরিক, সালফিউরিক ও নাইট্রিক অ্যাসিড; ট্রাইক্লোরো-ইথেন এবং অ্যাসিটোন। এরা বস্তুগত ভাবে দূষিত পদার্থ। সৌর প্যানেলের কার্যক্ষমতা শেষ হয়ে গেলে এইসব ধাতব পদার্থ ও রাসায়নিক জল, মাটি ও বাতাসকে ভয়ানক ভাবে দূষিত করে। সৌর-কোষের জন্য প্রয়োজনীয় সিলিকন ও ব্যাটারি তৈরির উপাদান লিথিয়াম মাটির ভিতর থেকেই খনন করে তুলে আনতে হয়। তাই এই প্রক্রিয়ার শুরুতেই একপ্রস্থ বড় মাপের পরিবেশ দূষণ ঘটে। এই কথাগুলো উচ্চারণ করে না তথাকথিত ‘গ্রীন-এনার্জি’ র প্রবক্তরা। তাছাড়া লার্জ স্কেলে সৌরশক্তি উৎপাদনের জন্য প্রচুর পরিমাণে জমি লাগে, আর সেই জমি আসে বন ধ্বংস করে, পাহাড় কেটে, তৃণভূমি দখল করে এবং প্রচুর মানুষকে ভিটেমাটি ও চাষের জমি থেকে উৎখাত করেই। লাদাখ উপত্যকায় ঠিক এটাই ঘটছে। শক্তি ব্যবহারের বাস্তব ছবিটাকে সামনে আনা যাক এবার।
সবার আগে ভাবতে হবে –মানুষের জীবনধারণের জন্য নুন্যতম প্রয়োজন মেটাতে এবং সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এত এত শক্তির প্রয়োজন আদৌ আছে কী? বর্তমান বিশ্বে উৎপাদিত শক্তির মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় কলে-কারখানায় এবং দ্বিতীয় অবস্থানে আছে পরিবহন। মেট্রো শহরগুলিতে চারচাকা ও বাইকের আস্ফালন দেখে পরিবহন খাতে শক্তি ব্যবহারের খতিয়ানটা বুঝে নিতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। তথ্য বলছে –২০০৫ সালে ভারতে পরিবহন খাতে শক্তির ব্যবহার ছিল ২৮%, কিন্তু ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশে। অন্যদিকে শক্তির এক বড় অংশ খরচ হয় অপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের যথেষ্ট উৎপাদন, তার পরিবহন ও বাজারে এইসব পণ্যকে বিক্রয়যোগ্য করে তোলার জন্য লাগামছাড়া বিজ্ঞাপন খাতে। আর বর্তমান যুগে তথ্য-প্রযুক্তির জালে বিশ্বকে জুড়তে গিয়ে প্রতিবছর হাজার হাজার গিগাওয়াট বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার হয় নলেজ ইকোনমি তথা জ্ঞান-অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে।
অন্যদিকে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া, ইজরায়েলর মতো সমরাস্ত্রে বলিয়ান রাষ্ট্রগুলোতে শক্তির অধিকাংশটাই ব্যয়িত হয় যুদ্ধাস্ত্র তৈরি ও সামরিক খাতে সৈন্যদের দৈনিক প্রয়োজন মেটাতে। ভারতবর্ষও এর থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই। সাহিত্যিক অমিতাভ ঘোষ তাঁর ‘The Nutmegs Curse’ বইয়ের একটি প্রবন্ধে এই বিষয়টিকে তথ্য সহকারে প্রাঞ্জলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন –“মিলিটারি বাহিনীর ক্ষমতা বহাল রাখা ও সামরিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানিই প্রধান চালিকাশক্তি এবং এই ক্ষেত্রে পেট্রোলিয়াম ও কয়লার ব্যবহার সূচকীয় গতিতে উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে”। ভারতবর্ষে সীমান্তবর্তী অঞ্চল গুলোতেও একই ঘটনা ঘটছে। আর এই শক্তির উৎপাদন হচ্ছে কিসের বিনিময়ে? এই বিপুল শক্তির উৎপাদন চলতেই থাকবে, তা সে যে পদ্ধতিতেই হোক না কেন, প্রকৃতি পরিবেশ বিনষ্ট করে এবং আদিবাসী জনজাতি সহ সাধারণ মানুষকে ভিটেমাটি, কৃষিজমি থেকে বিতাড়িত করেই। তাই বিশ্বজুড়ে চলতে থাকা বড় মাপের পরিবেশ বিপর্যয়কে শুধুমাত্র উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে বা নবায়নযোগ্য শক্তি-উৎস ব্যবহার করে সমাধান করা যাবেনা। গলদের মূল ধরে টানতে না পারলে বাস্তবত কোন প্রকৃত সমাধান পাওয়া সম্ভব নয়। এইসব বিষয়গুলোকে হিসেবের মধ্যে, ধর্তব্যের মধ্যে না এনে তথাকথিত বিকল্প জ্বালানির পক্ষে গলা ফাটানোর পিছনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। প্রথমত: অদূর ভবিষ্যতে জীবাশ্ম জ্বালানির ভান্ডার যাবে ফুরিয়ে। এই সংকট নিরসনে পুঁজির মালিকদের আজ বিকল্প শক্তিক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত: ব্যাংক-পুঁজি ও রাষ্ট্রের সহযোগিতায় ফুলেফেঁপে ওঠা ফিকটিশাশ ক্যাপিটালকে বাস্তবের মাটিতে বিনিয়োগ করে রিয়েল করা ও মুনাফার হার বাড়িয়ে নেওয়ার অন্ধ তাগিদে স্বয়ং হিমালয়ের প্রকৃতি এবং হিমালয়বাসী সহ সমগ্র ভারতবাসীর জীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসছে, সেই বিষয়ে রূপকারদের কোন হেলদোল নেই। তাঁরা বোধহয় ভুলেই গেছেন –পরিকল্পনার নীল নকশা, আঁকিবুঁকি, মাপজোক করছেন মাটি বালি ও ভঙ্গুর হিমালয়ের উপর, তাঁদের ড্রইংরুমে বিছানো ম্যাপের ওপর নয়। এখানেই জোরালো প্রশ্ন তুলতে হবে, পুঁজির সংকট নিরসনে আর ওদের নাফা বুঝে নেওয়ার খেলায় কেন বলিপ্রদত্ত হতে হবে পাহাড়বাসী, জঙ্গলবাসী, আদিবাসী মানুষজনদের? হিমালয়ের নৈসর্গ ও তামাম জীববৈচিত্র্যকে কেন ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলা হবে?
অথচ হিমালয় সংলগ্ন স্থানীয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য যেটুকু বিদ্যুতের প্রয়োজন, তা তৈরি করা সম্ভব ছিল প্রকৃতির কোন ক্ষতি না করেই পাহাড় থেকে নেমে আসা অজস্র ঝোরা বা জলপ্রপাতের নিচে ছোট ছোট টার্বাইন বসিয়ে জলবিদ্যুৎ তৈরি বা সৌরশক্তিকে ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে। পাহাড়ের ওপর বাতাসের গতিকে কাজে লাগিয়ে ছোট ছোট হাওয়া-কল বা উইন্ড মিল বসিয়েও এই চাহিদা মেটানো সম্ভব ছিল। এতে করে নৈসর্গিক হিমালয়ের ভারসাম্য বজায় থাকত, রক্ষা পেত তামাম জীববৈচিত্র্য, স্থানীয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও সচল থাকত। অর্থাৎ, প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানুষের শ্রমশক্তি কাজে লাগিয়ে মানুষের নূন্যতম প্রয়োজনের ভিত্তিতে শুধুমাত্র ব্যবহার মূল্য তৈরি করলে প্রকৃতির সংহার করতে হয় না। অথচ ব্যবহার মূল্য তৈরি না করে পুঁজির সঞ্চয়নের স্বার্থে বিনিময় মূল্যের (এক্সচেঞ্জ ভ্যালু) জন্য পন্য উৎপাদন করলে পুঁজির সংকট আপাত মিটলেও তাকে প্রকৃতির লুণ্ঠন ও নিষ্পেষণ বাড়িয়েই চলতে হয়, যার হাত ধরে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকাও ব্যাহত হয় চক্রাবর্ত হারে। এবং এই প্রক্রিয়ায় পাহাড়ের সাথে সমতলের এবং গ্রাম থেকে শহরের মধ্যে বিপাকীয় ফাটলের (মেটাবলিক রিফ্ট) রেখা দীর্ঘতর হচ্ছে। কিন্তু এসব ভেবে পুঁজির মালিকদের কোন লাভ নেই। ওদের চায় নতুন নতুন বিনিয়োগ ও সেই অর্থ (money) সুদে-আসলে ফেরত নিয়ে আসা। তাতে প্রকৃতি-পরিবেশ-মানুষ গোল্লায় গেলেও ভ্রুক্ষেপ না থাকাটাই পুঁজির স্বাভাবিক নিয়ম। তাই ‘জনগণের স্বার্থে উন্নয়ন’ ও‘পরিবেশ-বান্ধব’ বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন –সরকার ও কর্পোরেটের এই ধারাভাষ্যের পিছনে আসল রহস্যটা স্পষ্ট করে বুঝে নেওয়ার দরকার। অন্যদিকে সংকট কাটাতে গিয়ে পুঁজি আরও নতুন নতুন সংকটের জালে আবদ্ধ হচ্ছে। আক্ষরিক অর্থেই পুঁজি নিজের কবর নিজেই খুঁড়ে চলেছে। আমাদের ঘা মারতে হবে পুঁজির এই দুর্বল জায়গাতেই।
প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় হিমালয়ের গুরুত্ব:
জম্মু-কাশ্মীর থেকে লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশের একটা অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত হিমালয় হাজার লক্ষ প্রাণ ও উদ্ভিদ প্রজাতি নিয়ে অফুরন্ত জীব-বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ভারতবর্ষের অন্যতম পর্বতশ্রেণী। অন্যদিকে এই হিমালয়ের হিমবাহগুলি হল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জলের আধার। হিমালয়ের গর্ভে রয়েছে ২০ হাজারের বেশি হিমবাহ। বিশ্বের অনেক বড় নদী যেমন ইয়াংসি, মেকং ইত‍্যাদির উৎস হিমালয়ের হিমবাহ। গঙ্গা, অলকানন্দা, ধৌলি, ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু সহ একাধিক নদীর উৎসও হিমালয়ের এইসব হিমবাহ। একশ কোটির বেশি মানুষ বেঁচে থাকার জন্য সরাসরি হিমালয়ের উপর নির্ভর করেন, দক্ষিণ এশিয়ার ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এবং চীনের ৪৫০ মিলিয়ন তুলনায় নবীন ও ভঙ্গুর এই পাহাড়ের প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জলবায়ু নিয়ন্ত্রণেও হিমালয় অদ্বিতীয়।
উত্তরে এই সুউচ্চ হিমালয় এবং তিনদিকে সাগর বেষ্টিত ভারতবর্ষে ছিল ছয় ঋতুর এক সুন্দর সমাহার। হিমালয় বিপন্ন হওয়ার কারণে ঋতুচ্ছন্দেও ব্যাঘাত ঘটেছে। শরৎ হেমন্ত বসন্ত তো কবেই হারিয়ে গেছে। শীতকালটাও ছোট হতে হতে কোথায় যেন মিলিয়ে গেছে। আর দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমী বায়ু হিমালয়ের বুকেই ধাক্কা খেয়ে বৃষ্টির ধারা নামিয়ে আনে। কৃষিনির্ভর আমার দেশ হয় সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা। দেশের পাহারাদার আসলে এই হিমালয়ই, যা নিজের বুক পেতে দেশকে রক্ষা করে দানবীয় ঝড়ঝঞ্ঝার হাত থেকে।
অথচ হিমালয় ও গঙ্গা সহ বড় নদীগুলো বিপন্ন হওয়ার কারণে প্রকৃতির ভারসাম্য ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি নদীবহুলা দেশের কৃষি বাস্তুতন্ত্রের সংকট ঘনীভূত হচ্ছে, কৃষক এবং মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের জীবনজীবিকা বিঘ্নিত হচ্ছে, হিমালয়ের পাদদেশে বসবাসকারী জনজাতির জীবনযাত্রায় ভয়ঙ্কর প্রভাব ডেকে আনছে। হিমালয় না থাকলে, বড় নদীর প্রবাহ দূষিত ও বাধাপ্রাপ্ত হলে প্রকৃতি কেন্দ্রীক নদীমাতৃক ভারতীয় সভ্যতা সংস্কৃতি, ভাষা, পোশাক পরিচ্ছদ, সাহিত্যও হারিয়ে যাবে কালের গর্ভে। হিমালয় হাওয়া হয়ে গেলে মেট্রো শহরগুলো ধূ ধূ মরুভূমি। আর ঠিক এখানেই মহাকবি কালিদাস হয়ে জীবনানন্দ, বিভূতিভূষণ, মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথের দেশের মানুষদের হৃদয়ে মননে আবেগে কোন না কোনভাবে নাড়া লাগছে। তাই সরাসরি পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক বা রাজনীতিবিদ না হলেও সোনম ওয়াংচুক, মাতৃসদন আশ্রমের সাধুসন্তরা আজ হিমালয় বাঁচাতে, অবিরল নির্মল গঙ্গার দাবিতে সামনের সারিতে এগিয়ে আসছেন। হিমালয়কে বিপর্যস্ত করার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন জোশী মঠের শঙ্করাচার্য সহ বিজেপি নেত্রী উমা ভারতীর মতো মানুষজনও।
অথচ রাষ্ট্রনায়ক ও কর্পোরেট বাহিনী এই হিমালয়কেই ধ্বংস করতে উদ্যত। অর্থপুঁজি আর বাজারের কানাগলিতে অন্ধভাবে ছুটতে ছুটতে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সমাজের এক বড় অংশের হৃদয়ে মননেও মরচে পড়েছে। স্থাবর অস্থাবর সম্পদ তৈরির প্রাণপণ প্রচেষ্টায় সে আজ নিজের ক্ষুদ্র শরীরকেই বৃহৎ করে তুলেছে। মানুষের বৃহত্তর সত্তা: গাছ পাহাড় জঙ্গল সবুজ বনানী নদী-নালা সমুদ্র, যার উপর নির্ভর করে আমাদের জন্ম, বেড়ে ওঠা ও টিকে থাকা; তার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে একক স্বার্থপর মানুষের দঙ্গলে পরিণত হচ্ছে। তার বৃহত্তর সত্তা: প্রকৃতি কেন্দ্রীক চিন্তা, মানবতা, মনুষ্যত্ব, সমাজবোধ সবকিছু পচে মরছে।

ভাবার কথা

পৃথিবীর সর্বত্রই নদীর দুইধারে নদীমাতৃক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। পানীয় জলের সুবিধা, কৃষিকাজের জন্য উর্বর জমি, পশুপালনের জন্য বিস্তীর্ণ চারণভূমি, মৎস্য শিকার এবং জলসেচের সুবিধা থাকার কারণে নদী তীরবর্তী সভ্যতা গড়ে উঠেছে। প্রায় আট হাজার বছর আগে নীলনদের তীরে মিশরীয় সভ্যতা, সিন্ধু নদীর তীরে হরপ্পা সভ্যতা, টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর তীরে মেসোপটেমিয়া ও ব্যাবলনীয় সভ্যতা, হোয়াঙহো নদীর তীরে চৈনিক সভ্যতা গড়ে ওঠে। পরবর্তী কালে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় গাঙ্গেয় সভ্যতা গড়ে ওঠে। এই সকল অঞ্চলে বসবাসকারী অধিবাসীগণ তাঁদের যাত্রা শুরু করেছিলেন প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবেই। প্রকৃতি ও মানুষসহ সমস্ত প্রাণীর সেই ঐক্য ছিল সহজাত, অকৃত্রিম ও জীবন্ত এক প্রক্রিয়ার অংশ। তাঁদের এই সজীব মিথোজীবিতার প্রধান ভিত্তি ছিল যূথবদ্ধতা, সহমর্মিতা, সহযোগিতার বোধ। পাহাড়ের কোলে, জঙ্গলের মধ্যে বসবাসকারী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় এই বোধ আজও টিকে আছে বলেই পাহাড় জঙ্গলের প্রকৃতি পরিবেশ এখনও অনেকাংশে সজীব।
অথচ নদীমাতৃক দেশের নদনদীগুলো আজ শুধু দুষিত বিষাক্তই নয়, তা লুঠ হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে। গঙ্গা তার অববাহিকায় যুগযুগ ব্যাপী ধরে রেখেছে ভারতের সভ্যতাকে, এই মানবসভ্যতা গড়ে ওঠার মূলে গঙ্গার অবদান বলে শেষ করা যায়না। হিমালয়ের বিপর্যয়ের হাত ধরে নদীর উৎসমুখের একের পর এক হিমবাহ বিলুপ্ত হচ্ছে। গঙ্গার উৎসমুখে নয়টি হিমবাহ কমতে কমতে এখন পাঁচটিতে এসে ঠেকেছে। যাদের দশাও করুণ। গঙ্গাকে বর্ষার জলধারা যুগিয়ে জীবিত রেখেছে যেসব অসংখ্য নদী, উপনদী, শাখা নদী: সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দোহাই পেড়ে জল লুঠ করে, জমি দখল করে তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। বিপন্ন হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মৎস্যজীবীদের যাপন, প্রভাব পড়ছে দেশীয় কৃষি ব্যবস্থাতেও। অন্যদিকে বাঁধ বেঁধে অবরুদ্ধ করা হচ্ছে নদীর মুক্ত প্রবাহকে, যা নদীকে হত্যা করার নামান্তর। ২০২৩ সালে দীপাবলির প্রাক্কালে আমরা যখন আলোয় বন্যায় ভাসার প্রস্তুতি নিচ্ছি, ঠিক সেই আবহেই সিকিমের কয়েক শত নিরীহ মানুষ বানের জলে ভেসে গেলেন। ঘরবাড়ি, গাড়ি, গবাদি পশু সব খড়কুটোর মতো ভাসতে থাকল তিস্তার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে। অন্যদিকে বড় বড় বাঁধের ফলে নদীর নিম্ন অববাহিকায় স্বাভাবিক স্রোত শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বর্ষার অতিবৃষ্টিতে প্রায় প্রতি বছর প্রবল বন্যার কবলে পড়েন হাজার লক্ষ মানুষ।
গঙ্গাকে শুকিয়ে মারার চক্রান্তের বিরুদ্ধে, নির্মল অবিরল গঙ্গার দাবিতে হরিদ্বারের ‘মাতৃসদন আশ্রম’ এর সাধুরা বিগত কয়েক বছর ধরেই শান্তিপূর্ণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। অনশনে চারজন শহীদ সন্ন্যাসীর একজন –কানপুর আইআইটি’র ভূতপূর্ব অধ্যাপক ডঃ জি ডি আগরওয়াল। গঙ্গা রক্ষায় গেরুয়া ধারণ করে তিনি ‘স্বামী সানন্দ’ নাম গ্রহন করেছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল, ভারতের মানুষের কাছে ধর্মীয় চিন্তাভাবনা, আচার অনুষ্ঠান একটি অন্যতম বিষয়। তাই গঙ্গাকে বাঁচাতে ধর্মের ছায়াতলে আসতেও তিনি দ্বিধাবোধ করেননি। এই আন্দোলনের সাথী হিসেবে ‘নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলনের’ এর সদস্য ও পরিবেশ কর্মীরা নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নদী রক্ষায়, নদী সচেতনতা বৃদ্ধিতে সক্রিয় দীর্ঘদিন। গ্রামবাংলার মজে যাওয়া, খালে বা ক্লেদাক্ত নালায় পরিণত হয়ে যাওয়া ছোট নদীগুলোকে সংস্কার করে, নদী প্রবাহের সমস্ত বাধাকে সরিয়ে তাদের পুনরুজ্জীবিত করার অভিযান ডালপালা মেলে বিকশিত হচ্ছে। হিমালয়, জঙ্গল, নদী, জলাশয় এবং মানুষের জীবন-জীবিকা সহ সভ্যতা সংস্কৃতি রক্ষা করার অভিযান আমাদের রাজ্য সহ সারা দেশে সহস্র ধারায় আরও গতিশীল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বাড়ছে দিনদিন। সম্ভাবনার বীজগুলোকে এক সুতোয় গেঁথে বড় মালায় রূপ দেওয়ার কাজে এগিয়ে আসতে হবে সকলকে।
এই সম্ভাবনার চারা গাছে জল সিঞ্চন করল সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়। ৬এপ্রিল ভারতের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল – “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারতের পরিবেশ ও প্রকৃতিতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা থেকে সুরক্ষা এ দেশের নাগরিকদের এক মৌলিক ও মানবিক অধিকার।” জলবায়ু বিপর্যয় থেকে নাগরিকের সুরক্ষার অধিকারকে সংবিধানের ১৪ ও ২১ অনুচ্ছেদের সাথে যুক্ত করে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে –“পরিষ্কার নির্মল ও সুস্থিত প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় না থাকলে জীবনের ও সাম্যের অধিকার পূর্ণতা পায় না। তাই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল, ভালোভাবে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করা।” সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশকে কাজে লাগিয়ে সরকার ও প্রশাসনকে বাধ্য করতে হবে পরিবেশ রক্ষা তথা মানবিক অধিকারকে সুরক্ষিত রাখতে অবিলম্বে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে। তাহলে বাঁচবে হিমালয়, গঙ্গা সহ তামাম মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতি।
যোগাযোগ:
santoshsen66@gmail.com

ফিচার ছবি। Manisha Mondal | ThePrint

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top